বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোদির আমলেই ফুলেফেঁপে উঠেছে ভারতের গরুর মাংস রপ্তানি

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২১:৩১

ক্ষমতায় আসার আগে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস সরকারের সময়ে গরুর মাংস রপ্তানির বিরুদ্ধে ব্যাপক সরব হয়েছিলেন। তিনি ব্যঙ্গ করে এই রপ্তানির নাম দিয়েছিলেন ‘পিঙ্ক রেভল্যুশন’ ও দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস সরকার দেশের ১৪ শতাংশ মুসলমানকে খুশি করতে এই খাতকে উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের গরু ও মহিষের মাংস রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

বর্তমানে প্রতিবছর ভারত এ খাত থেকে আয় করছে প্রায় ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতিবছর দেশটি প্রায় ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন মাংস রপ্তানি করে। এর ফলে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাংস রপ্তানিকারক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল, আর ভারতের পরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

ভারতে গরু জবাইয়ের জন্য রাজ্য পর্যায়ে বিধি-নিষেধ থাকলেও, অভিন্ন কোনো জাতীয় আইন নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক শিথিল আইন থাকা রাজ্যে গরু পাচার করে মাংস রপ্তানি করে থাকেন। সমালোচকদের মতে, এই খাতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির চেয়ে আর্থিক বাস্তবতাই বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

এদিকে, ভারতের মাংস রপ্তানির সিংহভাগই মহিষের মাংস বলে দাবি করা হলেও অনেকেই বলছেন, গরুর মাংসের পরিমাণও কম নয়। ভারতে বর্তমানে প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ মহিষ রয়েছে, যা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি। অন্যদিকে, ভারতের গরুর সংখ্যা ৭ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি।

ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুধ উৎপাদনকারী দেশ। দুধ দেওয়া শেষ হলে অনেক গরুই চামড়া ও মাংস শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ফলে গরুর মাংসও ভারতের বৈদেশিক রপ্তানি আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

বর্তমানে ভারত ৬৫টি দেশে মাংস রপ্তানি করছে। উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে ভারতীয় মাংসের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। কারণ এসব মাংস আসে মুক্ত চারণভূমিতে লালিত গরু-মহিষ থেকে, যা তুলনামূলক স্বাস্থ্যসম্মত বলে বিবেচিত হয়। ভারতীয় মাংসের দামও অনেক সময় ব্রাজিল বা অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় কম, ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ভারত ক্রেতাদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

আবার অর্থনৈতিক লাভের কারণে হিন্দু ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক হারে এই খাতে প্রবেশ করেছেন। ভারতের শীর্ষ ছয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটির মালিক হিন্দু উদ্যোক্তা। এর মধ্যে রয়েছে শতীশ ও অতুল সাবরওয়ালের আল-কাবির এক্সপোর্টস, সুনীল কাপুরের অ্যারাবিয়ান এক্সপোর্টস, মাদান অ্যাবটের এম.কে.আর ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টস ও এ.এস. বিন্দ্রার পি.এম.এল ইন্ডাস্ট্রিজ। এ তথ্য প্রমাণ করে, ধর্মীয় বিভাজন থাকলেও অর্থনৈতিক লাভের কারণে হিন্দুরাও সক্রিয়ভাবে এ শিল্পে যুক্ত হচ্ছেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ভারতের রপ্তানিকৃত সব মাংসে হালাল সনদ দেওয়া হলেও, নাটকীয়ভাবে বিজেপি সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে হালাল সার্টিফিকেশন নিষিদ্ধ করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে লক্ষ্য রেখে হালাল মান বজায় রাখা হলেও দেশের ভেতরে ভিন্ননীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মোদি ক্ষমতায় আসার আগে যেই শিল্পকে কটাক্ষ করেছিলেন, সেই মাংস রপ্তানি খাত তার আমলেই রেকর্ড আয়ে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দিক থেকে এই খাত ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে ও বৈশ্বিক মাংস বাজারে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর