বৈদেশিক ঋণ মেটাতে গিয়ে তৈরি হওয়া তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করে রাস্তায় নেমে এসেছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দেশটির রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করে বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন তারা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের একাংশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
তবে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া এই মুহূর্তে ওই বাসভবনে নেই বলে জানিয়েছে সরকারের একটি সূত্র।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিন বিদ্যুৎসংকটের কারণে কলম্বোর সড়কের বাতি নিভিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সন্ধ্যা থেকে প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। তারা সরকার থেকে প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেন।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা। তারা বাহিনীটির একটি বাসে আগুনও লাগিয়ে দেয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকেই শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় মোটরসাইকেল দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ চালকরা।
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন।
আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দেশটির এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এতে লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারে।
গত কয়েক বছরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশের বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২০ সালে শুরুর দুই মাসে রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে যায়।
ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারে! শুধু তা-ই না, বছরের বাকি সময়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারকে।
প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ মেটানোর জন্য রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় শ্রীলঙ্কা সরকার। এর পর থেকেই দেশটিতে সংকট বাড়তে থাকে।