বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাতারের গ্যাস পেতে ইউরোপের সামনে যত বাধা

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২২ ১৮:২১

কাতার তাদের উত্তরাঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র বাড়াতে ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আগামী চার বছরে দেশটির গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা ৬০ শতাংশ বাড়বে। এরপর এর অর্ধেক তারা ইউরোপকে দেয়ার আশা করছে।

ইউক্রেনে অভিযানের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার উল্টোপিঠও দেখছে ইউরোপ। রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের আতঙ্কে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা। রাশিয়া থেকে আসা গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছে মহাদেশটির পরাশক্তিরা। কাতারকে অন্যতম বিকল্প হিসেবে দেখে ইইউ, কিন্তু ইউরোপের বিপুল চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা এ মুহূর্তে কাতারের রয়েছে কি না সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কাতারের জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে সিএনএন। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সিএনএনের প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

সিএনএনের বেকি অ্যান্ডারসনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী সাদ শেরিদা আল-কাবি বেশ ঠাট্টার ছলেই বলেন, ‘চাহিদার কেন্দ্রে থাকতে ভালোই লাগে। ইউরোপের সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলছে।’বিশ্বে এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) অন্যতম শীর্ষ সরবরাহকারী কাতার হঠাৎ করেই লাইমলাইটে চলে এসেছে। এর কারণ কয়েক দশক ধরে ইউরোপের দেশগুলোকে জ্বালানি জুগিয়ে আসা রাশিয়ান গ্যাসের বিকল্প এখন খুঁজে বের করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়।

তবে কাবি সতর্ক করছেন তাদের। তার মতে, এই মুহূর্তে ইউরোপে রাশান গ্যাসের বিকল্প হওয়া ‘বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়’। তিনি যোগ করেন, কাতারের বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা ইউরোপের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। তবে ভবিষ্যতে তা যথেষ্ট হতে পারে।ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তার প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪০% এর জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। গত সপ্তাহে জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক কাতারের গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে দোহা ত্যাগ করেন। বর্তমানে কাতার থেকে সরাসরি এলএনজি চালানের কোনো টার্মিনাল জার্মানির নেই। তবে দেশটি দুটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেয়েন গত শুক্রবার এলএলএনজির বিকল্প খুঁজে বের করা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সামগ্রিক চাহিদা কমানোর লক্ষ্যে একটি যৌথ টাস্কফোর্স ঘোষণা করেন।

কাতার এনার্জি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা আল-কাবি বলেন, ‘ইউরোপ আমাদের জন্য অন্যতম এক গন্তব্য ও গুরুত্বপূর্ণ বাজার। আমরা ইউরোপকে ভবিষ্যতে জ্বালানি সরবরাহ করব।’

কাতার তাদের উত্তরাঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র বাড়াতে ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আল-কাবির মতে, আগামী চার বছরে দেশটির গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা ৬০ শতাংশ বাড়বে। এরপর এর অর্ধেক তারা ইউরোপকে দেয়ার আশা করছে।

আল-কাবি বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা সুয়েজ খালের পূর্বপাশে ৫০ শতাংশ ও পশ্চিমপাশে ৫০ শতাংশ থাকতে চাই।

কাতারের ৮০ শতাংশ গ্যাস যায় এশিয়ার ক্রেতাদের কাছে। এদের অনেকেরই কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে, যে কারণে তারা চাইলেই অন্য ক্রেতাকে সরবরাহ করতে পারবে না।

রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা কমাতে কাতার কী করতে পারে?

বিশ্বের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে রাশিয়ায়। এর পরিমাণ কাতারের মজুতের প্রায় দ্বিগুণ। ইউরোপে ব্যবহৃত গ্যাসের ৪০ শতাংশই রাশিয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ মুহূর্তে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প ভাবাটা কার্যত অসম্ভব।

দুবাইভিত্তিক জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কামার এনার্জির সিইও রবিন মিলস বলেন, ‘বিশ্ববাজারে খুচরা কোনো এলএনজি নেই। আর সেটার জন্য দর-কষাকষি এর দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।’কাতার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে থাকা গ্রাহকদের জ্বালানি দেয়া বন্ধ করলেই কেবল ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাসের বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তবে তেমনটি করতে কাতার আগ্রহী নয়। এটি করলে ওই ক্রেতারা ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে।

ইউরোপ হাইড্রোকার্বনের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে, আর তাই চীন ও ভারতের মতো এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতি কাতারের গ্যাসের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে। এমনটাই ধারণা করছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইউসেফ আলশামারি।ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রও জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে ২০২২ সালে ইউরোপকে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করবে।

আল-কাবি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা বড় একটা সুযোগ। আমি নিশ্চিত, কোনো এক পর্যায়ে তারা ইউরোপের অন্যতম বড়, এমনকি সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হতে যাচ্ছে।

কাতারের জ্বালানি দিয়ে রাশিয়ান গ্যাস প্রতিস্থাপনে কী ধরনের লজিস্টিক সমস্যা দেখা দেবে?

রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে সরবরাহ করা হয়। কাতার থেকে ইউরোপে কোনো গ্যাস পাইপলাইন নেই। এ কারণে উপসাগরীয় দেশটির জ্বালানি তরল আকারে ইউরোপে পাঠাতে হবে।

আলশামারি বলেন, ‘প্রাকৃতিক গ্যাসের তরলীকরণে অনেক শক্তি প্রয়োজন। এতে কার্বন নির্গমন হবে ও জলবায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি কঠিন হবে। কারণ তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু এজেন্ডা ও কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্য নির্ধারণ করেছেন।’

ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ক্যারেন ইয়াংয়ের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলোর চালানের উপযোগী অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে, যা তৈরি করতে সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ও স্পেনের মতো যেসব দেশে আগেই অবকাঠামো রয়েছে তাদের জন্য কাতারের গ্যাস পাওয়া সহজ হতে পারে।ওয়াশিংটন ডিসির স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ সেন্টারের নিকোস সাফোস বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, ইউরোপ এমন একটি এলএনজি বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, যা তার বিপুল পরিমাণের প্রয়োজন মেটাতে পারবে না। অবশ্য কাতার ইউরোপে আরও জ্বালানি পাঠাতে পারে, কিন্তু ইউরোপে অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চ মূল্য থাকার পরও তারা সেটি করেনি। এ থেকে বোঝা যায় এশিয়ায় দেশটির সরবরাহ ধারণার চেয়ে বেশি জটিল হতে পারে।’

কাতার-রাশিয়া সম্পর্কে কী প্রভাব পড়তে পারে?

কাতার তাদের জ্বালানি চুক্তিকে বাণিজ্যিক লেনদেন হিসেবে দেখাতে চায়। আল-কাবি বলছেন তিনি জ্বালানির সঙ্গে রাজনীতিকে মেশাতে চান না।

জার্মানির জ্বালানি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির কথা উল্লেখ করে আল-কাবি বলেন, ‘দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাঝে এটি একটি বাণিজ্যিক চুক্তি। ব্যবসার দিক থেকে আমাদের কাছে কোনো পক্ষ নেই। আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করি ও নিজস্ব ব্যবসা করি।’

মিলস বলেন, ‘কাতার এ চুক্তিকে বাজারভিত্তিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখাতে চাইবে। রাশিয়ার বিপক্ষে কৌশলগত কোনো পদক্ষেপ হিসেবে নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর