রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধের রুশ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে জি-সেভেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এটি পরিষ্কার, আমরা বিনা মূল্যে গ্যাস দেব না।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেসকভের এই সতর্কতা এমন সময় এলো যখন শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি-সেভেন জানিয়েছে, ইউরোর বদলে রুবলে গ্যাস কেনার রুশ দাবি মানবে না জি-সেভেন।
রুশ মুখপাত্র জানিয়েছেন, জি-সেভেনের এমন সিদ্ধান্তে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কী হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে ইউরোপ যে বিনা মূল্যে গ্যাস পাবে না, তা নিশ্চিত।
এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রুশ সম্পদ জব্দ করার অবৈধ সিদ্ধান্তের কারণে তাদের মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দেশগুলোকে রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে।
এ-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
যদিও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। পুতিন জানিয়েছেন, চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যতেই গ্যাস সরবরাহ করবে রাশিয়া। শুধু অর্থ প্রদানে মুদ্রার পরিবর্তন হবে।
তবে শুধু গ্যাসের বিষয়েই নয়। পুতিন বলেন, ‘আমাদের পণ্য ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে ডলার বা ইউরোতে লেনদেনের কোনো মানে হয় না।’
রুশ প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জি-সেভেন সম্মেলনে জার্মান মন্ত্রী হ্যাবেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি বিদ্যমান চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে জি-সেভেনভুক্ত সব মন্ত্রী একমত হয়েছেন। আমরা পুতিনের দাবি মেনে না নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভক্ত করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের চেষ্টা স্পষ্ট। কিন্তু আপনারা আমাদের দৃঢ় ঐক্য থেকে বুঝতে পারছেন, আমরা বিভক্ত হব না।’
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভের বার্তায় স্পষ্ট যে জি-সেভেনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে রাশিয়া।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী সাদ আল-কাবি সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প পাওয়া ‘ব্যাবহারিকভাবেই অসম্ভব।’
সাদ আল-কাবি শুধু কাতারের জ্বালানিমন্ত্রীই নন, তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কাতার এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও।
সাক্ষাৎকারে সাদ বলেন, বিশ্ববাজারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া সরবরাহ করে। দেশটির তেল-গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরিকল্পনা নেই কাতারের। কাতার মনে করে, জ্বালানিকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ তাদের মিত্র দেশগুলো মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, লেনদেনে ডলার এবং ইউরো সীমিত করেছে। বিদেশে রাশিয়ার ৩০০ বিলিয়ন ডলার জব্দ করা হয়েছে। যদিও রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছে এসব দেশ।