ইউরো বা ডলারে নয়, রুবলে গ্যাস কেনার রাশিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে একমত হয়েছে জি-সেভেন জোটভুক্ত দেশগুলো।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার জি-সেভেন জোটভুক্ত অন্যান্য দেশের জ্বালানি মন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সম্মেলনের পর জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক এ কথা জানান।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী। সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে। এর পাল্টা জবাবে বুধবার ‘অবন্ধু’ দেশে গ্যাস বিক্রির বিল রুবলে নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান পুতিন।
বন্ধুত্বপূর্ণ নয় এমন দেশের তালিকা মার্চের গোড়ায় প্রকাশ করে রাশিয়া। সেখানে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সুইজারল্যান্ড ও নরওয়ের নাম আছে।
রুশ প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জার্মান মন্ত্রী হ্যাবেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি বিদ্যমান চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে জি৭ভুক্ত সব মন্ত্রী একমত হয়েছেন। আমরা পুতিনের দাবি মেনে না নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভক্ত করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের চেষ্টা স্পষ্ট। কিন্তু আপনারা আমাদের দৃঢ় ঐক্য থেকে বুঝতে পারছেন, আমরা বিভক্ত হবো না।’
যুদ্ধ শুরুর পর রুশ মুদ্রা রুবলের মান কমতে থাকলেও নতুন সিদ্ধান্তে বুধবার থেকে রকেটের গতিতে বাড়ছে রুবলের দাম।
বুধবারই সর্বশেষ তিন সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে রুশ মুদ্রার দাম সর্বোচ্চ হয়েছে। এরই মধ্যে ১ ডলারের বিপরীতে ১০০-এর নিচে নেমে ৯৬-এ স্থির হয়েছে রুবল। ইউরোর বিপরীতেও দাম বেড়েছে। প্রতি ইউরো এখন বিনিময় হচ্ছে ১০৫.৫৭ রুবলে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই মাসের শুরুর দিকে রুশ মুদ্রা রুবলের মান ইতিহাসে সর্বোচ্চ কমেছিল। গত মার্চের ৭ তারিখে প্রতি ডলারে ১৩২ রুবল ও ইউরোতে ১৪৭ রুবলে নেমে আসে। যেখানে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডলারের বিপরীতে ছিল ৭৫ রুবল ও ইউরোর বিপরীতে ছিল ৮৫ রুবল।
রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ তেল, গ্যাস ও ধাতু রপ্তানিকারক; এসব পণ্যের লেনদেন এতদিন সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ডলারে হতো।
তবে ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়া শাসন করে আসা পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের আধিপত্য নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসছিলেন।
রাশিয়া এখন বলছে, সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশ, ডলার ও ইউরোর ব্যবহার নিয়ে মস্কোর যে বিভ্রম ছিল, তা কেটে গেছে।
শুক্রবার ক্রেমলিন বলেছে, পুতিন গ্যাজপ্রমকে রপ্তানি করা গ্যাসের মূল্য রুবলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওই নির্দেশ কার্যকরে তাদের হাতে সময় আছে আর মাত্র চার দিন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম ইউরোপের মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রুশ সম্পদ জব্দ করার অবৈধ সিদ্ধান্তের কারণে তাদের মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দেশগুলোকে রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে।
যদিও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। পুতিন জানিয়েছেন, চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যতেই গ্যাস সরবরাহ করবে রাশিয়া। শুধু অর্থ প্রদানে মুদ্রার পরিবর্তন হবে।