কোমরের অসহ্য ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক গৃহবধূ। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচারের খরচ আড়াই লাখ টাকা। তবে মাত্র ২ টাকা খরচ করেই তিনি পেয়েছেন সুফল।
অত্যাধুনিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন বা আরএফএ পদ্ধতিতে তার চিকিৎসা করে সফলতা পেয়েছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল।
হাওড়ার লিলুয়ার চকপাড়ার গৃহবধূ ৪৫ বছরের যমুনা দাস কোমরে অসহ্য ব্যথা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন ১৫ মার্চ।
সংসারের হাল ধরতে যমুনার ভরসা সেলাই মেশিন। বাড়ির কাছেই একটি কারখানায় কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি। গত চার বছর ধরে পিঠ ও কোমরের ব্যথায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি ব্যথায় তার বসে কাজ করা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দেখা গেল, তার মেরুদণ্ডের ডিস্কে সমস্যা রয়েছে।
কোনো কাটাছেঁড়া না করে শুধু রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গের মাধ্যমে তার সমস্যা দূর হয়েছে বলে জানিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল।
চিকিৎসকদের দাবি, ভারতে এই প্রথম কোনো সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা হলো
যমুনা বলেন, ‘আবার হাঁটতে, বসতে পারব তা ভাবতেই পারিনি। এখন আবার নিজে থেকেই সব করছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরে ওষুধ খেলেও কোনো উপকার হয়নি। বরং ব্যথা আরও বাড়তে থাকে।
১৫ মার্চ তিনি ভর্তি হন এসএসকেএম হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগে। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, যমুনার মেরুদণ্ডের চার ও পাঁচ নম্বর কশেরুকার মাঝে যে ডিস্ক (জেলির মত অংশ) রয়েছে সেখানেই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। সেখানকার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথার বার্তা পৌঁছাচ্ছে মস্তিষ্কে। চিকিৎসার পরিভাষায় সেটিকে বলা হল, ‘ডিস্কোজেনিক পেন’।
পিএমআর বিভাগীয় প্রধান ডা. রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘সাধারণত অস্ত্রোপচার করে ওই ডিস্কের সমস্যার অংশটি কেটে বাদ দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সমস্যার আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কোনো কাটাছেঁড়া না করেই ডিস্কের সমস্যাটি দূর করা হবে।’
রাজেশ বলেন, ‘রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন পদ্ধতিতে ওই কশেরুকা দুটিকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যথা সৃষ্টিকারী নার্ভগুলো অকেজো হয়ে যাওয়ায় ব্যথা কমে গেছে।’
চিকিৎসকেরা জানান, তাপের মাধ্যমে ডিস্কের ভেতরের স্নায়ুগুলিকে পুড়িয়ে দেয়ার সময়ে সতর্ক থাকতে হয়, যাতে বাইরের স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তা হলে রোগী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারেন।
এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘বাইঅ্যাকুপ্লাস্টি’। দিল্লিতে এক বেসরকারি হাসপাতালে ‘বাইঅ্যাকুপ্লাস্টি’ করা হয়। খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা।
রাজেশ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা করা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে প্রথম এই চিকিৎসা দেয়া হলো। আগামী দিনে আরও রোগীর ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগবে।’