নাম স্টেপান, বয়স ১৩ বছর। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার ১১ লাখের কাছাকাছি। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের মুখে আটকা পড়েছিল সে। স্টেপানকে নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় ছিল ভক্তরা। অবশেষে সব শঙ্কা কাটিয়ে নিরাপদে ফ্রান্সে আশ্রয় পেয়েছে সে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লাভইউস্টেপান’ নামের ইন্সটাগ্রাম পেজ থেকে জানা গিয়েছিল রুশ মিসাইল হামলায় অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল স্টেপানের। স্টেপানের হয়ে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি চালান তার মালিক আন্না। জানিয়েছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত খারকিভ শহরে আটকে ছিলেন তারা, আটকে ছিল স্টেপানও।
স্টেপান এখন নিরাপদে আছে জানিয়ে তার মালিক আন্না বুধবার ইন্সটাগ্রামে আপডেট দিয়েছেন। জানিয়েছেন পোল্যান্ড থেকে নিরাপদে তারা ফ্রান্সে পৌঁছেছেন।
আন্না লেখেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলাম। ভোর ৫টায় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। আমি বুঝতেও পারিনি কী হচ্ছিল।
View this post on InstagramA post shared by Степан (@loveyoustepan)
‘কিছুক্ষণ পর হয়তো আধঘণ্টা পর, আরও বিস্ফোরণ হয়। জানালাগুলো কেঁপে উঠছিল। আমি লাফিয়ে উঠেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম ভয়ানক কিছু একটা ঘটছে!
‘খারকিভের হামলা ও গোলাগুলি (বিশেষ করে উত্তর সালতোভকায় যেখানে আমরা থাকি) হচ্ছিল। বুঝতে পেরেছিলাম যে যুদ্ধ দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।’
এরপর আন্না তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। জানান, এক সপ্তাহ বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকতে হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবী তাদের একটি রেলস্টেশনে নিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা লভিভগামী ট্রেনে চেপেছিলাম। প্রায় ২০ ঘণ্টার ভ্রমণে লভিভ পৌঁছায়। তারপর আমরা পোল্যান্ড সীমান্তে চলে আসি।
‘সীমান্তে আমরা একটি পথচারী ক্রসিংয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। অনেক লোক ছিল (৪-৫ হাজার)। ৯ ঘণ্টা পর আমরা সীমান্ত পার হলাম। আমরা যখন পোল্যান্ডে পৌঁছলাম, তখন মোনাকোর প্রভাবশালী এবং ব্লগার অ্যাসোসিয়েশন থেকে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।’
গ্রুপটি আন্না ও স্টেপানকে ফ্রান্সে যেতে সাহায্য করেছিল। সেখানে এখন তারা নিরাপদে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ঠিক আছি। তবে ইউক্রেনে আমাদের আত্মীয়দের নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে। তার পরও দেশের স্বার্থে আমরা যথাসাধ্য কাজ করে যাব।’
ইউক্রেন ছাড়ছে স্টেপান। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালীদের একত্রিত করার কাজটি করে থাকে ওয়ার্ল্ড ইনফ্লুয়েন্সার এবং ব্লগারস অ্যাসোসিয়েশন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, গত বছর স্টেপানকে বিশ্বের শীর্ষ ‘পেটফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে একজন’ তকমা দেয় তারা।
যখন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মারিয়া গ্রাজিনা চ্যাপলিন স্টেপান আন্নার দুর্দশার কথা জানতে পারেন, তখনই তিনি পদক্ষেপ নেন। পোল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে তার সংগঠনটি।
সংঠনটির মুখপাত্র ইরিনা সাভচাক বলেন, এটা অতটা সহজ ছিল না। প্রতি মুহূর্তে আমরা তাদের খোঁজ রেখেছি। এখন ব্যক্তিগতভাবে ফ্রান্সে তাদের যত্ন নিচ্ছি।’
স্টেপান নিরাপদ আছেন যেনে তার ভক্তরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। ভক্তের এই তালিকায় আছেন, ব্রিটনি স্পিয়ার্স, অভিনেত্রী ডায়ান ক্রুগার এবং মডেল হেইলি বিবারের মতো সেলিব্রিটিরা।
লেখক বেন জুডাহ একটি টুইট বার্তায় বলেছেন, খারকিভের ইনস্টাগ্রামে আমি অনুসরণ করি। আমার প্রিয় বিড়ালটি ফ্রান্সে শরণার্থী হিসেবে নিরাপদে পৌঁছেছে। তার আশপাশে রাশিয়ান বাহিনী এমনকি তার নিজের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংসহ ভয়ংকরভাবে গোলাগুলির পরে।
ইয়াহু নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেপানকে আন্না এক মাস বয়সে উদ্ধার করেছিলেন। ২০১৯ সালে খ্যাতি অর্জন করেছিল, যখন একটি টিকটকে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। স্টেভি ওয়ান্ডারের ‘আই জাস্ট কলড টু সে আই লাভ ইউ’ গানটিতে এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে নানা কারসাজি করেছিল, যা ২৭ মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছিল।
গত বছরের শেষের দিকে একটি বিজ্ঞাপনে ইতালীয় ডিজাইনারের দুই হাজার ৮০০ ডলারের পার্স নিয়ে বিজ্ঞাপন জগতে হাজির হয়েছিল স্টেপান।