বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুলেট-নির্মিত পুতিনের শিল্পকর্মটি কবেকার?

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২২ ১৬:২০

সেই চিত্রকর্মের ছবি চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার হিসেবে প্রচার করা হয় অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস নামের একটি ফেসবুক পেজে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই পোস্টটি সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। বাংলাভাষী ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও মূল ছবিটি ব্যবহার করে পোস্ট দিচ্ছেন।

বুলেটের খোসা দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি শিল্পকর্মের ছবি ছড়িয়েছে ফেসবুকে।

এ সংক্রান্ত পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনের শিল্পী দারিয়া মারচেঙ্কো এই শিল্পকর্মের স্রষ্টা। ‘দ্য ফেইস অফ ওয়ার’ শিরোনামের এই শিল্পকর্মটি রাস্তা থেকে কুড়ানো ৫০০০ বুলেটের খোসা দিয়ে বানানো।

ইউক্রেনে রুশ অভিযানের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান থেকে পোস্টটি শেয়ার করছেন অনেকে। এতে বলা হয়েছে ‘শিল্পের চেয়ে শক্তিশালী কোনো প্রতিবাদ নেই।‘

আলোচিত শিল্পকর্মটির কোনো সূত্র পোস্টে উল্লেখ করা হয়নি। এটি কখন তৈরি করা হয়েছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিবাদ হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে শিল্পকর্মটি।

এ ধরনের পোস্ট অনেকেই দিয়েছেন ফেসবুকে

এই ছবির উৎস এবং প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।

দেখা গেছে, এই ছবিটি নিয়ে ফেসবুকে প্রথম পোস্ট দেয়া হয় ১৩ মার্চ। অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্টটির বিবরণে লেখা হয়, ‘দিস ইজ আ ফ্যান্টাসটিক পিস অফ পলিটিক্যাল অর্ট আউট অফ ইউক্রেন…।’

অকুপাই ডেমোক্র্যাটস-এর ব্যবহার করা ছবিতে ফটোশপে লেখা হয়, “ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা ৫ হাজার বুলেটের খোসা ‘দ্য ট্রু ফেস অফ ওয়ার’ শিল্পকর্মের অলঙ্করণে ব্যবহার করা হয়েছে।“

ইউক্রেনের শিল্পী দারিয়া মারচেঙ্কোর নামও উল্লেখ রয়েছে ছবিতে।

শিল্পকর্ম তৈরি করছেন দারিয়া মারচেঙ্কো

ফ্যাক্টচেক

অনুসন্ধানে দেখা গেছে শিল্পকর্মটি মিথ্যা নয়, তবে সেটি চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার নয়। দারিয়া মারচেঙ্কো এই ম্যুরালটি গড়েন এখন থেকে প্রায় সাত বছর আগে ২০১৫ সালে। ইউক্রেনের কিয়েভের এম সেভেন্টিন গ্যালারিতে ২০১৫ সালে ২৫ আগস্ট এর প্রথম প্রদর্শনী হয়।

ইউক্রেনে ২০১৪ সালে প্রবল জনবিক্ষোভের মাঝে রুশপন্থি হিসেবে পরিচিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ইইউর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক জোরদারের দাবি তুলে আয়োজিত ওই বিক্ষোভের সময় নিহত হন ২৮ জন।

এর পরেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সমর্থনে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে চলা সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষে প্রাণ হারিয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। এবার সামরিক অভিযানের শুরুতেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।

নিজের তৈরি শিল্পকর্মের সামনে দারিয়া মারচেঙ্কো

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাত শুরুর পরের বছর ২০১৫ সালে আলোচিত ম্যুরালটি তৈরি করেন দারিয়া মারচেঙ্কো। সে সময়ে ৩৩ বছর বয়স্ক দারিয়াকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

দারিয়া মারচেঙ্কোর ওয়েবসাইটে শিল্পকর্মটি সংক্রান্ত তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে এই শিল্পকর্মের প্রদর্শনীও হয়েছে। নিজের ওয়েবসাইটে ম্যুরালটি তৈরির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন দারিয়া। সেখানে তিনি লিখেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন অস্ত্রের প্রায় ৫ হাজার বুলেট সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে এই শিল্পকর্ম। এতে আলোর বহুমাত্রিক ব্যবহার করে যুদ্ধের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পুতিনের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।

আলোর খেলায় শিল্পকর্মে বিভিন্ন অভিব্যক্তি

সেই চিত্রকর্মের ছবি চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার হিসেবে প্রচার করা হয় অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস নামের একটি ফেসবুক পেজে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই পোস্টটি সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। বাংলাভাষী ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও মূল ছবিটি ব্যবহার করে পোস্ট দিচ্ছেন।

অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস নামের ফেসবুক পেজে ১৩ মার্চের পোস্ট

এরই মধ্যে ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের দায় পড়েছে মূল পোস্টটির ওপর। স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ইউএসএ টুডের একটি বার্তা ওই পোস্টটির সঙ্গে যুক্ত করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এমন প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ছবির শিরোনামে পরিবর্তন এনেছে অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটস।

ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে অক্যুপাই ডেমোক্র্যাটসের পোস্ট

নতুন শিরোনামে সংশোধনী দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এই পোস্টটি ভ্রান্ত পরিপ্রক্ষিতের রেটিং পেয়েছে। ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, ম্যুরালটি ২০১৫ সালে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী ডনবাস প্রদেশের লড়াইয়ের সময় সংগ্রহ করা বুলেটের খোসা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি বর্তমান সময়ের আক্রমণকালের নয়। এটি ইউক্রেনের রাজনৈতিক শিল্পের একটি চমৎকার নিদর্শন …।’

এ বিভাগের আরো খবর