ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহন করা চার্টার্ড বিমান আকাশে ‘দুর্ঘটনা’র মুখে পড়েছিল। পাইলটের দক্ষতায় নিরাপদ অবতরণ সম্ভব হলেও বিষয়টি নিয়ে তিন দিনেও কাটেনি ধোঁয়াশা।
গত শুক্রবার অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর উত্তরপ্রদেশের বারানসী থেকে ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। তাকে বহন করা চার্টার্ড বিমানটি কলকাতা বিমানবন্দরে নামার কয়েক মিনিট আগে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে আকাশে কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে আসে। বিমানের টালমাটাল পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্য যাত্রীরা।
পাইলটের বক্তব্য অনুসারে, আকস্মিক দুর্যোগের মুহূর্তে বিমানটি সাত হাজার ফুট থেকে দুই হাজার ফুট উচ্চতায় নেমে আসে। সেই সঙ্গে দুলতে থাকে বিমানটি।
এ ঘটনায় মমতা কোমরে চোট পেয়েছেন বলে জানা যায়। তার রক্তচাপও বেড়ে যায়। এসব তথ্য জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।
তবে সেদিন কী ঘটেছিল আকাশে তা স্পষ্ট করেনি এয়ারপোর্ট অথরিটি।
প্রাথমিকভাবে এয়ারপোর্ট অথরিটি দাবি করে, আবহাওয়া খারাপ থাকায় ‘এয়ার পকেটে’ পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে বহন করা বিমানটি, যা আবহাওয়া সংবাদ ও পাইলটের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না।
এ পরিস্থিতে শুক্রবারের ওই ঘটনা সম্পর্কে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলেছেন। সোমবার তিনি এয়ার পকেটের দাবিকে নাকচ করেছেন জোরালোভাবে।
মমতা জানান, বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, এয়ার পকেট নয়, ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। সে সময় অন্য একটি বিমান কাছাকাছি চলে আসায় পাইলট সংঘর্ষ এড়াতে দ্রুত কয়েক হাজার ফুট নিচে নামিয়ে আনেন বিমানটি।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সোমবার ছিল রাজ্যের বাজেট অধিবেশন। সেখানে প্রবেশের আগে মমতা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বিমানটি এয়ার পকেটে পড়েনি। সামনে অন্য একটি বিমান চলে এসেছিল। তাতেই বিপত্তি ঘটে। পাইলটের দক্ষতায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। আর কয়েক সেকেন্ড দেরি হলেই বিরাট দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আর বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি মিলিয়ে সেদিনের ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক প্রশ্ন।
নবান্ন সূত্র জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বিমানের ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, কেন হয়েছে, তা জানতে চেষ্টা চলছে। সব খুঁটিনাটি জানার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) আকাশে এ ধরনের ঘটনায় জরুরি তদন্ত করে থাকে। যদিও তাদের পক্ষ থেকে এখনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এদিন পাইলট যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতে ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও সব প্রশ্নের জবাব নেই। সেদিনের ভাড়া করা ফ্যালকন বিমানে পাইলট হিসেবে ছিলেন বাবা ও মেয়ে। তারা মিনিট চারেক বিলম্বে নিরাপদে বিমানটিকে কলকাতার মাটি স্পর্শ করান।
এদিন আকাশ যথেষ্ট পরিষ্কার ছিল। মেঘ, বৃষ্টি, ঝড় ছিল না বলেই পাইলট জানিয়েছেন। তিনি আচমকা বিপদের ইঙ্গিত পেয়ে দ্রুত উচ্চতা প্রায় পাঁচ হাজার ফুট নামিয়ে দেন। তাতেই প্রবল ঝাঁকুনি ও ওলটপালট অবস্থা হয়।
লিখিত বক্তব্যে পাইলট দাবি করেন, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম আকাশে যখন সাত হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ছয় হাজার ফুটে নামছিলেন, তখন আচমকা তিনি সামনে ‘বিপজ্জনক মেঘ’ দেখতে পান।
কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) তিনি বিষয়টি জানালে দুই হাজার ফুট উচ্চতায় নেমে আসতে বলা হয়। সে নির্দেশনাই তিনি পালন করেছেন। সামনে অন্য বিমানের অস্তিত্ব নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।
নবান্ন সূত্র জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর জেড প্লাস নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন। এয়ারপোর্ট অথরিটির কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ ত্রিবেদী।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আবহাওয়া খারাপ থাকার যে তথ্য দিয়েছে, সেটি আগে মুখ্যমন্ত্রীসহ যাত্রীদের অবগত করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসন। বিমানটির রুট ক্লিয়ারেন্স ছিল কি না, সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি দেশের প্রথম সারির নেতা। তার নিরাপত্তায় গাফিলতি থাকা উচিত নয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।’