মস্কোর সঙ্গে শর্তহীন আলোচনা শুরু করতে ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে প্রতিনিধিদল পাঠাতে রাজি হয়েছে কিয়েভ।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন ধরনের শর্ত ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির প্রতিনিধিরা।
প্রতিনিধিদল পাঠালেও আলোচনা ফলপ্রসু হবে কী না তাতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি আমার জায়গায় পুরোপুরি সৎ ও একনিষ্ঠ। তবুও আলোচনা সফল হবার বিষয়ে আমার সংশয় রয়েছে। তবে দুই প্রতিনিধিদলকে সুযোগ দেয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা দেখা দিতে আমিও আলোচনায় অংশ নেব।’
এর আগে, রাশিয়ার দেয়া শর্তের কারণে বৈঠকে বসার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় ইউক্রেন।
এর পরই পারমাণবিক অস্ত্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সেনাদের বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার সেনাদের রোববার খারকিভ শহর থেকে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন সেনারা। অনেকে ধারনা করছেন, কিয়েভের এমন দাবির মুখে দেশটির বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে থাকতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
তবে ইউক্রেনের বৈঠকে বসার সিদ্ধান্তে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন মোড় নেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আলোচনা ফলপ্রসু হলে সংঘাতময় পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে রুশ প্রতিনিধি দল প্রতিবেশী বেলারুশের গোমেল শহরে পৌঁছে রোববার।
রোববার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে এমনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলার চতুর্থ দিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিনিধি দল সেখানে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের প্রধান ও দেশটির সাবেক সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিশেষ দূত মেদিনস্কি আরও বলেন, ‘রুশ প্রতিনিধি দল ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাশিয়া-ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী শহর গোমেলে স্থানীয় সময় বেলা ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।’
প্রতিনিধি দল না পাঠানোর কথা নিশ্চিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির মুখপাত্র সার্জি নিকিফরোভ বলেন, ‘এই ধরনের শর্তসাপেক্ষের আলোচনায় বসতে আমরা মোটেও রাজি নই। রাশিয়া দাবি করেছে, আলোচনায় বসতে হলে ইউক্রেনীয় সেনাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।’
জেলেনস্কির মখপাত্র আরও বলেন, ‘গোমেলে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিশ্ববাসীকে সুকৌশলে রাশিয়া জানাতে চাইছে যুদ্ধ বন্ধে তাদের ইচ্ছা থাকলেও ইউক্রেনের নেই। আলোচনায় ক্রেমলিনের সদিচ্ছা থাকলে তারা আমাদের ওপর একতরফা শর্ত জুড়ে দিত না।’
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এ অভিযানের চতুর্থ দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় লড়াই চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের।
তিন দিনের হামলায় রাশিয়ার ৪ হাজার ৩০০ সেনা নিহতের দাবি করেছে ইউক্রেন। সেই সঙ্গে রাশিয়ার ২৭টি বিমান ও ২৬টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে দেশটি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে অন্তত ২৪০ জন বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে জাতিসংঘ। আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছে।