ফেসবুক-টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’সোমবার চালু করতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স দাবি করেছে, ট্রুথ সোশ্যাল নামের অ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার একটি স্ক্রিনশট তাদের হাতে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার অন্তত ৫০০ বেটা ইউজার এই অ্যাপটি ব্যবহার করেছেন।
অ্যাপটি নির্মাণকারী ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের (টিএমটিজি) প্রধান বিলি বি বলেন, ‘অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে নতুন এই অ্যাপটি সোমবার উদ্বোধনের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি।’
দেশটিতে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সোমবার উদযাপন করা হয় প্রেসিডেন্ট ডে। এই দিবসেই ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউবের বিকল্প হিসেবে ট্রুথ সোশ্যাল চালু করবেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
নিজস্ব এই অ্যাপটি চালুর মধ্য দিয়ে এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ থাকা ডনাল্ড ট্রাম্প শক্তিশালী এই সামাজিক মাধ্যমে ফের তার সরব উপস্থিতির জানান দেবেন।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, আগামী মাসেই পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করবে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের নিজস্ব অ্যাপটি যা বিশ্বের জনপ্রিয়তম ও বহুল ব্যবহৃত সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক-টুইটারকে রুখে দেবে।
ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে নিষিদ্ধ ট্রাম্প জানান, বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রুথ সোশ্যাল তৈরিতে কাজ করবে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। সাবেক আমেরিকান রাষ্ট্রপ্রধান ও ধনকুবের ডনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (টিএমটিজি) ও একটি বিশেষ অধিগ্রহণ সংস্থা ডিজিটিল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশন করপোরেশন (ডিডব্লিউএসি) একীভূত হয়ে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুটি কোম্পানিই। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে ট্রাম্প একটি লিখিত বক্তব্যও দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি, যেখানে টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে তালেবানের মতো কট্টরপন্থিদের বিচরণ দিন দিন বাড়ছে। তাও আপনাদের জনপ্রিয় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিশ্চুপ। এটা অগ্রহণযোগ্য।
‘টিএমটিজি সব মানুষকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার মহৎ লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল… ট্রুথ সোশ্যালে আমার সত্যটা আমি প্রকাশ করব খুব শিগগিরই। নিজের চিন্তাভাবনা আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব এবং বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’
গত বছরের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনায় টুইটার-ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ট্রাম্প সমর্থকদের চালানো ওই সহিংসতার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার উসকানিতেই ঘটেছে নজিরবিহীন ওই ঘটনা।
৭ জানুয়ারি থেকে দুই বছরের জন্য ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। ‘তিনি আরও সহিংসতা উসকে দিতে পারেন’-এমন শঙ্কায় টুইটারও ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়; অ্যাকাউন্টটিতে তার অনুসারীর সংখ্যা সে সময় ছিল প্রায় ৯ কোটি।
এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস ধরেই ট্রাম্প নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালু করবেন বলে শোনা যাচ্ছিল।
নির্ধারিত তিন ধাপের কর্মপরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী সব ঠিক থাকলে আগামী মাসের কোনো এক সময় যাত্রা শুরু করবে নতুন সামাজিক মাধ্যমটি। ২০২২ সালের প্রথমার্ধেই পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হবে ট্রুথ সোশ্যাল।
দ্বিতীয় ধাপে টিএমটিজি প্লাস নামের একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক ভিডিও সেবা চালু হবে। এতে থাকবে বিনোদন ও সংবাদমূলক কনটেন্ট আর পডকাস্ট।
নিজেদের ওয়েবসাইটে টিএমটিজি আভাস দিয়েছে, অ্যামাজন ডটকমের এডব্লিউএস ক্লাউড আর গুগল ক্লাউডকে টেক্কা দেয়া লক্ষ্য তাদের।
বিবৃতিতে টিএমটিজি জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ডিডব্লিউএসির সঙ্গে একীভূত হবে প্রতিষ্ঠানটি। ডিডব্লিউএসি একটি ‘ব্ল্যাংক চেক কোম্পানি’, অর্থাৎ কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই তাদের। বরং অন্য কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই লক্ষ্য ডিডব্লিউএসির।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর ২০২৪-এ পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।