বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মঙ্গল অভিযান নিয়ে স্বপ্ন বিজ্ঞানপ্রেমীদের অজানা নয়। সেই মঙ্গল অভিযানের জন্যই তার প্রতিষ্ঠিত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসএক্স’ বানাচ্ছে বিশাল দানবাকৃতির মহাকাশযান ‘স্টারশিপ’। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ পরীক্ষার পর অবতরণের ক্ষেত্রে সফলতার মুখ দেখা রকেটটি এবার কক্ষপথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তাহলে সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস। মহাকাশে যাওয়া মনুষ্য নির্মিত সবচেয়ে বড় রকেট হবে স্টারশিপ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক আশাবাদী, আর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন এই দানবাকৃতির রকেটকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠাতে সক্ষম হবে স্পেসএক্স।
স্টারশিপের সামনে দাঁড়িয়েই ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, মহাকাশযানটি প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত হওয়ার খুব কাছাকাছি।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। কারণ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে এর পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা ছাড়া স্টারশিপকে উৎক্ষেপণের অনুমতি দেয়া হবে না।
তবে মাস্কের মতে, এই মার্চের মধ্যেই মূল্যায়ন হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি এবং যন্ত্রাংশের প্রস্তুতিও পর্যবেক্ষণে রেখেছি। উভয়ের জন্যই যা কয়েক মাসের বিষয়।
আমি অত্যন্ত আশাবাদী, আমরা এ বছরই স্টারশিপকে কক্ষপথে প্রেরণ করতে পারব।’
এই স্টারশিপের নির্মাণ ও এর শক্তিশালী ইঞ্জিন নির্মাণে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছে স্পেসএক্স। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক ধাপে বুস্টার ইঞ্জিনের ও স্বচালিত অবতরণের পরীক্ষা শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই রকেটটিকে অবতরণের জন্য বোকা চিকায় বিশেষ ধরনের যন্ত্র বসানো হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘চপস্টিকস’।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও স্টারশিপ নিয়ে আগ্রহী। সংস্থাটি সামনের দশকে চাঁদে ও মঙ্গলে অভিযানের জন্য স্টারশিপের কোনো একটি ধরন ব্যবহার করতে চায়।
উল্লেখ্য স্টারশিপ যদি কক্ষপথে যেতে সফল হয়, এটিই হবে মহাকাশে যাওয়া মনুষ্য নির্মিত সবচেয়ে বড় রকেট। এর উচ্চতা ১২০ মিটার।
এখন পর্যন্ত মহাকাশে যাওয়া সবচেয়ে বড় রকেট হলো অ্যাপোলো সাটার্ন ফাইভ। এর উচ্চতা ১১১ মিটার। স্পেসএক্সের বানানো মহাকাশে যাওয়া সবচেয়ে বড় রকেটটি ৭০ মিটার উচ্চতার ফ্যালকন হেভি। মহাকাশে টেসলা গাড়ি নিয়ে গিয়ে আলোচনায় আসে রকেটটি।
যেখানে ফ্যালকন হেভি বহন করতে পারে ৬৩ হাজার ৮০০ কেজি, সেখানে স্টারশিপের সক্ষমতা হবে ১ লাখ কেজির ওপরে।
অ্যাপোলো সাটার্ন ফাইভ রকেটের ইঞ্জিন যেখানে ৩৫ মেগানিউটন বল সৃষ্টি করে, সেখানে স্টারশিপের বুস্টার ইঞ্জিন সুপার হেভি সৃষ্টি করতে পারে ৭৫ মেগানিউটন বল।
পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের সময় সুপার হেভি বুস্টার ইঞ্জিনটি স্টারশিপকে ৯০ মিনিটের জন্য মহাকাশে নিয়ে যাবে।
ইলন মাস্ক বলেছেন, স্টারশিপ সিস্টেম যখন পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে, তখন এটি চাঁদে কিংবা মঙ্গলে মানুষ নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
শুধু মহাকাশ অভিযানই নয়, রকেট সিস্টেমটি সারা বিশ্বেই দ্রুত মানুষ ও পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এ ছাড়া এটি স্যাটেলাইট স্থাপনও করতে পারবে। স্টারলিংকের স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রেও স্টারশিপকেই প্রধান বাহন হিসেবে দেখতে চান মাস্ক।
মাস্ক বলেন, ‘যখন বিমান প্রথম আসে, তখন সেগুলোকে খেলনা হিসেবে দেখা হতো। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় যখন প্রথম আকাশে ওড়ে, তখন বেশির ভাগ লোক কেবল ঘোড়ায় চড়ত; তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে একদিন বিশ্বের প্রতিটি কোণে কয়েক হাজার বিমান উড়বে।’
অর্থাৎ এটি সত্যিই বিরাট কিছু হতে পারে এবং আমরা এই সময়ে হয়তো এই রকেটের বহুমাত্রিক ব্যবহার কল্পনাও করতে পারি না।’