ইউক্রেন ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে পূর্ব ইউরোপে। বেলারুশে চলছে রুশ সামরিক মহড়া। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে অনেক দেশ।
দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, সবশেষ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। এ জন্য দূতাবাস তাদের সব ধরনের সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে রিয়াদ।
টুইটে কিয়েভে সৌদি দূতাবাস জানিয়েছে, ইউক্রেন সফর আপাতত সবাই যেন বাতিল করে। একই সঙ্গে যারা এই মুহূর্তে কিয়েভে অবস্থান করছেন, তারা যেন দ্রুত ইউক্রেন ছাড়ার জন্য দূতাবাসে যোগাযোগ করেন।
এর আগে একই নির্দেশনা আসে আমেরিকার পক্ষ থেকে। নাগরিকদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন ত্যাগের অনুরোধ করেছে ওয়াশিংটন। বলেছে, যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাসে যোগাযোগ করতে। সবশেষ জানানো হয় দূতাবাস কর্মী যাদের এ মুহূর্তে খুব প্রয়োজন নেই, তারা যেন দ্রুত ফিরে আসেন।
ইউক্রেন ইস্যুতে কূটনীতিক ফিরিয়ে নেয়া কিংবা কমিয়ে আনা বা তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে আনার শুরু গত মাসে।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া সেনা মোতায়েন শুরু করলে নিন্দা জানিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি সাময়িকভাবে দূতাবাস কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ফেরত পাঠাতে বলে কানাডা। এদিন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ইউক্রেনের ইহুদি নাগরিকদের ইসরায়েলে চলে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে গত ২৬ জানুয়ারি জানায় ইসরায়েল সরকার।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সদস্য দেশগুলোর থেকে নাগরিক ফিরিয়ে আনার পক্ষে। জোটের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছিলেন, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। তবে দ্রুত নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, লাটভিয়া, তুরস্ক সেই পথেই হাঁটছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারও ইউক্রেনকে নিরাপদ ভাবছে না।
পূর্ব ইউরোপের উত্তাপ ছুঁয়েছে এশিয়াতেও। পূর্বাঞ্চলের জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে। নিষিদ্ধ করেছে ভ্রমণ।
রাশিয়াও এখন ইউক্রেন থেকে কূটনীতিক কমিয়ে আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরটির খবরে বলা হয়েছে, মস্কোর আশঙ্কা, ‘পশ্চিমাদের উসকানির’ বলি হতে পারেন তারা।
নতুন সংকটের শুরু যেভাবে
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর ইউক্রেনের জন্ম। রাশিয়ার ইউক্রেনকে সব সময় পশ্চিমা বলয় থেকে মুক্ত রাখতে মরিয়া। প্রতিবেশী বেলারুশও মস্কোপন্থি। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য একচ্ছত্র।
এই অবস্থায় সামরিক সক্ষমতা দেখাতে সম্প্রতি সামরিক মহড়া বড় পরিসরে শুরু করে ন্যাটো । ইউক্রেনকে জোটে ভেড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে জোর।
আর এখানেই আপত্তি রাশিয়ার। তাদের দাবি, ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগ দেয়া রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এ ছাড়া সীমান্তে ন্যাটোর সামরিক মহড়ায় উদ্বিগ্ন মস্কো।
এ পরিস্থিতিতে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় রাশিয়া। সীমান্তে সম্প্রতি সেনা মোতায়েন শুরু করে তারা। ক্রেমলিন জানায়, ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে পশ্চিমাদের।
সেই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধের পাশাপাশি পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার কাছাকাছি কোনো দেশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না।
এসব দাবির মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার দাবি ছাড়া বাকি ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর কথা বলছে হোয়াইট হাউস।
আর এবার ইউক্রেনকে কেবল ন্যাটোতে নয়, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি দেখতে চায় না ক্রেমলিন। মস্কোর দাবি, ন্যাটোর কার্যক্রম তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। নিরাপত্তার খাতিরে ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করে লক্ষাধিক সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র। বেলারুশে ৩০ হাজার রুশ সেনা চালাচ্ছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ১০ দিনের সামরিক মহড়া।
এ ঘটনাকে স্নায়ুযুদ্ধের পর বেলারুশে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সেনা মোতায়েন বলছে ন্যাটো। ইউক্রেন আক্রমণের জন্য বেলারুশের আকাশ এবং স্থলপথে হামলার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মহড়াকে সত্যিকারের যুদ্ধ বা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। কারণ বেলারুশের যে অংশে মহড়া হবে, সেখান থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে কিয়েভ অবস্থিত।
২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া উপত্যকা দখলের সময়ও এমন মহড়ায় দেখা গিয়েছিল রুশ সেনাদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহড়া চলাকালীন ইউক্রেন আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে বিবদমান পক্ষগুলোর একটি ভুল ডেকে আনতে পারে যুদ্ধ।
পূর্ব ইউরোপের এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডে শক্ত ঘাঁটি আছে ন্যাটোর। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, আমেরিকাসহ ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশের সেনারা সেখানে প্রস্তুত আছে।