বেশ কয়েক বছর ধরেই নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন। অনেক বছর ধরেই যুক্তরাজ্য নিজস্ব ও কার্যকর ফিউশন রিঅ্যাক্টর নিয়ে কাজ করে আসছে।
মধ্য ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের কাছে দেশটির প্রধান নিউক্লিয়ার ফিউশন গবেষণাগার অবস্থিত। জয়েন্ট ইউরোপিয়ান টরাস (জেইটি) নামের এই প্রকল্প থেকে এবার নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তিতে বড় ধরনের সাফল্য দাবি করা হয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে সস্তা ও দূষণমুক্ত শক্তি অর্জনের পথে বিশ্ব আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
যুক্তরাজ্যের অ্যাটমিক এনার্জি অথরিটি বুধবার এক ঘোষণায় জানিয়েছে, ২০২১ সালের জুন মাসে জেইটি রিঅ্যাক্টরে এক পরীক্ষা চলার সময়ে রিঅ্যাক্টর থেকে ৫৯ মেগাজুল শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা শক্তি উৎপাদনের ১৯৯৭ সালে করা এই প্রতিষ্ঠানটির রেকর্ডের দ্বিগুণ।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির বিজ্ঞানমন্ত্রী জর্জ ফ্রিম্যানও ‘মাইলফলক’ ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য তার ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে ফিউশন প্রযুক্তিতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে একে বাস্তবে রূপ দান করছে।’
নিউক্লিয়ার ফিউশন এমন এক প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় সূর্য তাপ উৎপন্ন করে থাকে। ধারণা করা হয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিন বিশ্বব্যাপী দূষণমুক্ত ও নিরাপদ শক্তি সরবরাহ করবে, যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সহজ হবে।
ফসিল ফুয়েলকেন্দ্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। আর প্রচলিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে সৃষ্ট নিউক্লীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই হিসাবে ফিউশন রিঅ্যাক্টরে পরিবেশ দূষণ কিংবা নিউক্লীয় বর্জ্যের কোনো ঝামেলা নেই।
প্রচলিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর কাজ করে ফিশন প্রক্রিয়ায়। যেখানে একটি ভারী নিউক্লিয়াসকে একটি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে এটি বিভক্ত হয়ে দুটি হালকা নিউক্লিয়াস এবং প্রায় দুই শ মেগা-ইলেকট্রনভোল্ট শক্তি নির্গত করে।
অপরদিকে ফিউশন প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ততোধিক ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং শক্তি নির্গত করে। মূলত সূর্যে এ ধরনের বিক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়। এ ধরনের প্রযুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে সূর্যের বিক্রিয়াকেই অনুকরণ করতে হয়। তাই এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলে সেটাকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ বলা হয়।