আফ্রিকায় প্রথম মিলিমিটার রেঞ্জের রেডিও টেলিস্কোপ তৈরি করার সংবাদে আনন্দিত আফ্রিকা ও ইউরোপের জ্যোতির্বিদরা। যদিও টেলিস্কোপটি চালু হতে সময় লাগবে আরও পাঁচ বছর।
নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেলিস্কোপটিকে সম্ভবত নামিবিয়ার গ্যামসবার্গ নেচার রিজার্ভের টেবিল মাউন্টেনের ওপর কিংবা কাছাকাছি হবে। চিলির লা সিলায় অবস্থিত ১৫- মিটারের স্পেস টেলিস্কোপের কার্যক্রমই আফ্রিকা থেকে চালিয়ে যাবে এই টেলিস্কোপ। সুইডেনের অনসালা স্পেস অবজারভেটরি ও ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি এটি দান করছে।
প্রকল্পটি গত বছরের শেষ দিকেই নিশ্চিত করা হয়।
কেপটাউনে অবস্থিত আফ্রিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সচিবালয়ের প্রধান চার্লস টাকালানা টেলিস্কোপ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ও সক্ষম খেলোয়াড় হিসেবে আফ্রিকার অবস্থানকে মজবুত করার দিকে এটি আরও একটি পদক্ষেপ।’
জোহানেসবার্গে অবস্থিত উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইটস সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের পরিচালক রজার ডিন বলেন, এই টেলিস্কোপটি মহাদেশের মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণের একটি অনুপস্থিত জানালার অভাবকে পূরণ করবে এবং আফ্রিকার জ্যোতিপদার্থবিদ কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নেদারল্যান্ডের রেডবৌড ইউনিভার্সিটি নিজম্যাগেন ও উইন্ডহোয়েকের নামিবিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুরো প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করবে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৫ মিলিয়ন ডলার। এর অর্থায়নের অর্ধেক এসেছে রেডবৌড ইউনিভার্সিটি থেকে এবং অন্যান্য তহবিলদাতার মধ্যে নামিবিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি ও নেদারল্যান্ড রিসার্চ স্কুল ফর অ্যাস্ট্রোনমি।
টেলিস্কোপ দলটি ইতোমধ্যে নকশার নমুনা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে, যা পাহাড়ের মানমন্দিরের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে সহযোগিতা করবে। এর ফলে জানা যাবে এটি পাহাড়ের অন্য কোনো স্থানে স্থাপন করলে ভালো হবে কি না এবং এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তহবিল প্রয়োজন হবে কি না।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ও সক্ষম খেলোয়াড় হিসেবে আফ্রিকার অবস্থানকে মজবুত করার দিকে এটি আরও একটি পদক্ষেপ।
মিলিমিটার-ওয়েভলেন্থ রেঞ্জের টেলিস্কোপগুলো একটি ব্ল্যাকহোলের প্রান্তসীমার চিত্র তুলতে পারে। টেলিস্কোপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও রেডবৌড ইউনিভার্সিটির রেডিওল্যাবের একজন পরিচালক মার্ক ক্লেইন ওল্ট বলেছেন, দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে আপনি শুধু ব্ল্যাকহোলের সামান্য অংশ দেখেছেন, কিন্তু মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে আপনি একেবারে প্রান্তসীমা দেখতে পাবেন।
মহাকাশের এক রহস্যময় স্থান ব্ল্যাকহোল। জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনুসারে, ব্ল্যাকহোল হলো স্থান ও সময়ের এমন এক স্থান যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই বেশি, যেখানে আলোর মতো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে মিশে যায়। যার বিষয়ে জ্যোতির্বিদদের ধারণা খুব কম।
মিলিমিটার-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নতুন এই টেলিস্কোপ আমাদের ব্ল্যাকহোলের আরও অজানা তথ্য জানাতে পারবে। এমনটাই আশা করা হচ্ছে।