ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার লক্ষাধিক সেনা মোতায়েনের ঘটনায় যুদ্ধের আশঙ্কা করছে বিশ্বের অনেক দেশ। যেকোনো সময় বেধে যেতে পারে যুদ্ধ। ঠিক এমন অবস্থায় ইউক্রেন সফরে এলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সফরে এসে এরদোয়ান উত্তেজনা কমিয়ে আনতে এবং মস্কোর পক্ষ থেকে যেকোনো হামলার ভয়কে দূরীভূত করতে উভয় পক্ষের আলোচনার জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন তিনি।
এই প্রস্তাব এমন সময় এলো যখন রাশিয়া অভিযোগ করেছে রোমানিয়া ও পোলান্ডে বাড়তি সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার সৃষ্টি করছে। মস্কো তাদের মোতায়েন করা লক্ষাধিক সেনা প্রত্যাহারে অস্বীকার করেছে।
ফলে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে তুরস্কের পক্ষে মধ্যস্থতার ভূমিকায় থাকা সম্ভব। কারণ রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যেমন ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি কিয়েভের প্রতিও রয়েছে দেশটির সমর্থন। আর তুরস্ক ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়ায় এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি বলেন, যেকোনো স্থানে, যেকোনো পদ্ধতিতে ইউক্রেনে শান্তি আনতে যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজ করে যেতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান বলেছেন, প্রতিবেশী দুই দেশের সংঘাত পছন্দনীয় কিছু নয়। কিন্তু ন্যাটো সদস্য হিসেবে, যদি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে ইউরোপের পূর্বাঞ্চল রক্ষায় যেই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, তুরস্ক তা নেবে।
এদিকে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের বিপরীতে থেমে নেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর তৎপরতা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে আরও সেনা মোতায়েনের ঘটনা ঘটবে। পেন্টাগন গত সপ্তাহে যে ৮ হাজার ৫০০ সেনাকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছিল, নতুন পাঠানো সেনারা এর বাইরের।’
রাশিয়া উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হাঙ্গেরীয় প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটি পরিষ্কার যে রাশিয়ার উদ্বেগের জায়গাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’
এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ নেই। তাদের লক্ষ্য রাশিয়ার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা। ইউক্রেনকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। আমি আশা করি, অবশ্যই আমরা একটি সমাধান খুঁজে পাব, যদিও তা এত সহজ হবে না।’
ক্রেমলিনের ধারণা, যদি ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পায়, তাহলে ক্রিমিয়া ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে দেশটি।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপত্যকা দখলে নেয় রাশিয়া। শুরু হয় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে মস্কো মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ নিহত হন।