ইউক্রেন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার পারদ বাড়ছেই। কূটনীতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের কথা বললেও বিবদমান পক্ষের আচরণ দিনকে দিন সংঘর্ষের দিকে এগোচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জন্য ইউক্রেন বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে রাশিয়ার অধিপতি ৬৯ বছরের ভ্লাদিমির পুতিনের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আবারও শক্তি সঞ্চয় করেছে।
যার প্রমাণ সিরিয়া গৃহযুদ্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের পক্ষে বিদ্রোহী দমনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। রুশপন্থি বিদ্রোহীদের উসকে ২০১৪ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপত্যকা দখলে নেয় মস্কো।
পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার এমন আগ্রাসন মেনে নিতে পারেনি আমেরিকা। উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন জোট সামরিক মহড়া শুরু করে ওয়াশিংটন। তাদের দাবি, ক্রেমলিনের এমন আচরণ আগ্রাসী। তবে ইউরোপ আক্রান্ত হলে শক্ত জবাব দেয়া হবে।
আমেরিকার এমন হুঁশিয়ারি আমলে নেননি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ক্রিমিয়া ইস্যুতে কোনো আলোচনায় যেতে নারাজ সাবেক এই কেজিবি প্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাপাটে হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়ে ছিলেন উদাসীন। এর জন্য অবশ্য প্রেসিডেন্ট হতে ট্রাম্পকে রাশিয়া সাহায্য করেছিল বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ এনেছিল আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে অভিশংসন শুনানি পাশ কাটিয়ে পূর্ণ মেয়াদ শেষ করেন ট্রাম্প।
কিন্তু ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বাইডেন পূর্ব ইউরোপে রুশ হস্তক্ষেপকে সহজ চোখে দেখছেন না। ওই অঞ্চলে সামরিক সক্ষমতা দেখাতে ন্যাটোর সামরিক মহড়া শুরু করে বড় পরিসরে। ইউক্রেনকে ন্যাটো দলে ভেড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে জোর।
আর এখানেই আপত্তি রাশিয়ার। তাদের দাবি, ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগ দেয়া রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এ ছাড়া সীমান্তে ন্যাটোর সামরিক মহড়ায় উদ্বিগ্ন মস্কো।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় রাশিয়া। সীমান্তে সম্প্রতি সেনা মোতায়েন শুরু করে মস্কো। কারণ হিসেবে ক্রেমলিন জানায়, ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে পশ্চিমাদের।
সেই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধের পাশাপাশি পোলান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার কাছাকাছি কোনো দেশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না।
এসব দাবির মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার দাবি ছাড়া বাকি ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর কথা বলছে হোয়াইট হাউস।
এই অবস্থায় প্রথম ধাপে ইউক্রেনে ৯০ টন অস্ত্রের সরঞ্জাম পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। গত ডিসেম্বরের চুক্তি অনুযায়ী আরও সহায়তা পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
বিষয়টি গড়ায় জাতিসংঘেও। কিন্তু সেখানে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে ভেস্তে যায় আলোচনা।
- আরও পড়ুন: রাশিয়াকে ঠেকাতে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
- আরও পড়ুন: নিরাপত্তা পরিষদে উত্তেজিত যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া
এরই মধ্যে ইউক্রেনকে প্রায় চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে লক্ষাধিক সেনা। ক্রিমিয়ায় তো দীর্ঘদিন শক্ত অবস্থানে রুশ সেনারা। বেলারুশ সীমান্তে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে তারা। অবস্থান নিয়েছে মলদোভা সীমান্তেও। এক কথায় ইউক্রেন এক প্রকার অবরুদ্ধ। স্যাটেলাইট ছবিতে এসব ধরা পড়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অবশ্য এসব ঘটনাকে নিয়ে অতোটা চিন্তিত নন। তার দাবি, এসব নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পশ্চিমারা।
ইউক্রেনের অনেক সাধারণ নাগরিক একাট্টা রুশ আগ্রাসনের বিপক্ষে। ইতিমধ্যে তারা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে। খবর পাওয়া গেছে সাধারণ নারীরা এখন অস্ত্র চালানো প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে দেশটি। তারা জানিয়েছে, ন্যাটোভুক্ত দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে আরও দুই হাজার সেনা মোতায়েন করছে। এ ছাড়া ন্যাটো দেশগুলোর ‘শক্তিশালী প্রতিরক্ষা’ গড়ে তুলতে জার্মানি থেকে এক হাজার সেনা সরিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগন জানিয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে নতুন এই সেনা মোতায়েন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোয় আরও সেনা মোতায়েন হবে। তবে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সেনা মোতায়েন করবে না।
তিনি জানান, এই সেনা পাঠানোর ঘটনা একটি সতর্ক বার্তা। মিত্রের ওপর যেকোনো আগ্রাসন প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত।’
যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশের গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন চলতি মাসেই ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে পারে পুতিনের রাশিয়া।