যুক্তরাজ্যে একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মাসখানেক আগেই দেশটির গাছে গাছে ফুল ধরছে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা দায়ী করছেন বৈশ্বিক উষ্ণতাকে।
উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে শরতের পাতা ঝরতে যেমন দেরি হচ্ছে, তেমনি গাছ ও গুল্মগুলোতে আবার তাড়াতাড়ি ফুল ফুটছে।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, ক্ষতি কি? মাসখানেক আগেই প্রেমিকাকে দিতে পারবেন রং-বেরঙের ফুল। কবিরাও ফুল নিয়ে এক মাস আগে থেকেই কবিতা লেখা শুরু করবেন। কিংবা ফুলবাগানে গিয়ে তুলির আঁচড় দেবেন কোনো কোনো চিত্রশিল্পী।
কিন্তু বেরসিক বিজ্ঞানীরা সেসব দিকে আর যাননি। তারা দেখছেন এই ঘটনার ঝুঁকিকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসখানেক আগে ফুল ফোটার এ প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা পোকামাকড়, পাখিসহ পুরো বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া এই পরিবেশগত অমিল কৃষিকাজের উৎপাদনশীলতার ওপর নাটকীয় প্রভাব ফেলতে পারে, এমনটাই ধারণা করছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক উলফ বুন্টজেন।
বুন্টজেন বলেন, ‘আমাদের জলবায়ুব্যবস্থা এমনভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, যা আমাদের এবং আমাদের পরিবেশকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এখন বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে বসন্ত তাড়াতাড়ি আসে এবং শরৎ অনেক জায়গায় দেরিতে আসে, ফলে প্রাণী ও গাছপালাগুলো একই হারে অভিযোজিত হচ্ছে না।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, প্রজাতিগুলো যদি একে অপরের সমন্বয়ের বাইরে চলে যায়, তবে তা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিকে ‘ইকোলজিক্যাল মিসম্যাচ’ বলা হয়ে থাকে।
উদ্ভিদের পরাগ, মধু, বীজ ও ফল কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে পাখি এবং অনেক বন্যপ্রাণীর খাবার। ফলে যদি ফুল খুব তাড়াতাড়ি আসে, তবে তারা তুষারপাতে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে গাছের ফল ও খাদ্যশস্য নষ্ট হবে। এর ওপর নির্ভর করা প্রাণিকুল ও পোকামাকড়ও খাদ্যসংকটে পড়তে পারে।
আমাদের জলবায়ুব্যবস্থা এমনভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, যা আমাদের এবং আমাদের পরিবেশকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণার পরিধি ছিল দক্ষিণে চ্যানেল আইল্যান্ডস থেকে উত্তরে শেটল্যান্ড ও পশ্চিমে উত্তর আয়ারল্যান্ড পূর্বে সাফোক পর্যন্ত সমগ্র যুক্তরাজ্য এবং প্রায় ১৮ শতক থেকে প্রথম ফুল ওঠার তারিখ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
ক্যামব্রিজের গবেষকরা ৪০৬টি উদ্ভিদ প্রজাতির প্রথম ফুলের তারিখগুলোকে জলবায়ু রেকর্ডের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন যে সময়ের আগেই ফুল ফোটা বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে মৌলিক বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব ফেলছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।