পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-রাজ্যপাল সংঘাত আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সাংবিধানিক পদে থেকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের অপসরণ চেয়ে সংসদে প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দিতে বিধানসভায় গিয়ে মঙ্গলবার রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
রাজ্যপালের পাল্টা সমালোচনা করে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্যপাল এখানে পুষ্পার্ঘ্য দিতে এসে তিনি যে এই মঞ্চকে সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চ বানিয়ে ফেলবেন, তা জানা ছিল না। তার এই আচরণ অবাঞ্ছিত, অসৌজন্যমূলক। যেকোনো প্রটোকল ও রীতিনীতির বাইরে।’তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে বৃহস্পতিবার লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ।
বৈঠক শেষে তৃণমূল সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্যপালের ভূমিকা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাজ্যপালের ভূমিকা থেকে স্পষ্ট যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যকে বিব্রত করতে তাকে পাঠিয়েছে। রোডম্যাপ করেই পাঠানো হয়েছে।’
লোকসভায় যুক্তি দিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদরা সরব হবে বলে জানান সুদীপ।
রোববার মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবসের অনুষ্ঠানে ব্যারাকপুর গিয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাজ্যপাল জাগদীপ।
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হতে চলেছে। মানবাধিকার হত্যা হয়, এমন ল্যাবরেটরি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে যাক, তা আমি মেনে নিতে পারব না। আমাদের সবার কর্তব্য সংবিধান অক্ষুণ্ন রাখা। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু নবান্নর একটাই নীতি, অল ইজ ওয়েল। এটা ঠিক না।’জগদীপের মন্তব্যের তুলোধোনা করে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘দেশের কোনো রাজ্যের বা অতীতে পশ্চিমবঙ্গের কোনো রাজ্যপালকে এমনভাবে কেন্দ্রের দলদাস হয়ে কাজ করতে দেখা যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যপাল সরানোর দাবি করছি।’
কলকাতার মেয়র, রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম রাজ্যপাল জগদীপের উদ্দেশে বলেন, ‘দয়া করে এ রাজ্য ছেড়ে চলে যান।’
রাজ্যপালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘রাজ্যপাল না জানেন বাংলার ইতিহাস, না জানেন রাজনৈতিক সচেতনতার ইতিহাস। বাংলার রাজনীতিতে সহিংসতা বরাবর ছিল। যদি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সেটা সার্বিক দায়। কোনো দলের দায় নয়।
‘ফেসবুক বা টুইটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওনার কী করণীয়, তা নিয়ে উনি কোনো সংবিধান বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। তাকে আমরা সম্মান দিতে চাই। পাশাপাশি তারও দায় রয়েছে সম্মানিত হয়ে ওঠার।’রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতময় এই পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক পদে থেকেও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে রাজ্যপাল জগদীপের অপসারণ চেয়ে রাজ্যসভায় প্রস্তাব আনতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু রায় এই প্রস্তাব আনতে পারেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।