এই মুহূর্তে আমরা যা দেখছি, তা কি এখনই ঘটছে? অর্থাৎ আমরা কি রিয়েল টাইমে ঘটনা প্রত্যক্ষ করি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একেবারেই তা নয়। আমরা বরং বাস্তব থেকে পিছিয়ে আছি প্রায় ১৫ সেকেন্ড! অর্থাৎ এখন চোখের সামনে যা ঘটছে বলে মনে করছি, আসলে তা ঘটে গেছে ১৫ সেকেন্ড আগে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ডেভিড উইথনি এবং স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাবারডিনের সহযোগী অধ্যাপক মাউরো মানসি উদ্ঘাটন করেছেন এই সত্য।
এই দুই মনোবিজ্ঞানী বলছেন, চোখের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছানোর পর মস্তিষ্ক তা ক্রমানুযায়ী সাজায়। তারপর একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির দৃশ্যপট দেখানো হয় আমাদের। এর কারণ হলো, তাৎক্ষণিক অজস্র তথ্য ‘দেখতে পেলে’ বিগড়ে যেত আমাদের মাথা। আর তাই কিছুটা সময় নিয়ে অপেক্ষাকৃত প্রয়োজনীয় দৃশ্যপট হাজির করে মস্তিষ্ক।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের চারপাশের দৃশ্য প্রতিনিয়ত বদলে যায়। ব্যক্তি, বস্তু, কণা সবকিছুর আকার পরিবর্তন হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে রং। এসব ঘটনাপ্রবাহের কিছু আবার ভীষণ এলোমেলো।
মজার বিষয় হলো, মস্তিষ্ক এই বিশৃঙ্খলতা এড়িয়ে এক ধরনের ‘স্থিতিশীলতার বিভ্রম’ তৈরি হয় মানব মনে। এ জন্য মস্তিষ্ক সময় নেয় ১৫ সেকেন্ড।
মস্তিষ্ক আদতে এক ‘টাইম মেশিন’
উইথনি এবং মানসি স্থিতিশীলতার বিভ্রমের কারণ বের করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এতে দেখা গেছে, মস্তিষ্ক সাধারণত দৃশ্যমান তথ্যগুলো সময়ের সঙ্গে গুছিয়ে নেয়।
প্রতিটি একক দৃশ্য বিশ্লেষণের পরিবর্তে, একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে অর্থাৎ ১৫ সেকেন্ডে যা দেখা হয়েছে তার সারসংক্ষেপ আমাদের দেখানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি তথ্যের সঙ্গে অন্যটির মিল রাখতে সবগুলোকে একত্রিত করে মস্তিষ্ক। একটি স্থিতিশীল পরিবেশের উপলব্ধি তৈরি করতেই এই কৌশল বেছে নেয়া হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্ক আসলে টাইম মেশিনের মতো। কম্পিউটার অ্যাপের মতোই প্রতি ১৫ সেকেন্ডে আমাদের ভিজ্যুয়াল ইনপুটকে একটি ইম্প্রেশনে একত্রিত করা হয়। আর এর ফলে বাস্তবের একটি খণ্ডিত রূপ দেখতে পাই আমরা।
তাৎক্ষণিক সব দেখা গেলে কী ঘটত?
মস্তিষ্ক সব সময় রিয়েল টাইমে আপডেট হলে পৃথিবী আলো, ছায়া এবং বস্তুর সচলতার অবিন্যস্ত রূপ দেখে এলোমেলো হয়ে যেত মানুষ। মনে হতো হ্যালুসিনেশনের জগতে বিচরণ করছি আমরা।
এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে মস্তিষ্ক। স্থিতিশীল চিত্র তৈরির প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে তা জানার জন্য একটি ‘বিভ্রমতার ডিভিও’ তৈরি করেছেন গবেষকরা।
এতে দেখা যায়, ধীরে ধীরে ৩০ সেকেন্ডের জন্য একটি মুখের বয়স বাড়ছে। কিন্তু ঠিক ৩০ সেকেন্ডের মাথায় বয়স্ক রূপটি ধরা কঠিন।
এই পরীক্ষার জন্য শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তা নিয়েছেন গবেষকরা। তাদের ৩০ সেকেন্ডের টাইমল্যাপস ভিডিওগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বুড়িয়ে যাওয়া চেহারার ক্লোজ-আপ ছবি দেখতে বলা হয়। ভিডিওর একেবারে শেষে মুখের বয়স জানতে চাইলে অংশগ্রহণকারীরা প্রায় ১৫ সেকেন্ড আগে উপস্থাপিত মুখের বয়স জানান।
এর ব্যাখায় বলা হয়েছে, আমরা সাধারণত অতীত নিয়ে ভাবি। তাই মস্তিষ্ক রিয়েল টাইমে সাম্প্রতিক দৃশ্যের বদলে, আগের সংস্করণগুলো দেখায়। মস্তিষ্ক রিফ্রেশ নিতে সময় নেয় প্রায় ১৫ সেকেন্ড।
প্রতিটি স্ন্যাপ শট ক্রমাগত গ্রহণ করে, তা সাজানোর কাজটা সহজ নয়। এ জন্য মস্তিষ্ক অতীতের সাহায্য নেয়। আসলে অতীতের তথ্য রিসাইকেল করে মস্তিষ্ক। এতে বর্তমানের অনুরূপ একটি আপাত বাস্তব দৃশ্য দেখানোর কাজটা অনেক সহজ হয়ে ওঠে।