প্রবাল প্রাচীর হলো সমুদ্রের তলে সবচেয়ে হুমকিতে থাকা বাস্তুসংস্থান। অথচ সমুদ্রের প্রাণী বৈচিত্র্যের ২৫ শতাংশের বাস এই প্রবাল প্রাচীরে। সমুদের দূষণ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ইমিশন ডিসলভিং রসায়নই বদলে দিচ্ছে। তাই বিশ্বের পরিবেশবাদীরা ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সমুদ্রের তলদেশের প্রবাল প্রাচীর রক্ষায় সোচ্চার।
এবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার তাহিতি উপকূলে ৩০ মিটার গভীরে এক দীর্ঘ ও প্রাচীন প্রবাল প্রাচীরের সন্ধান পেয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইউনেসকোর) সাগরতলের অনুসন্ধানকারী দল।
সমুদ্রের উপকূলের কাছে যে গভীরতাটি ‘টোয়ালাইট জোন’ নামে পরিচিত, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার তাহিতি দ্বীপের তেমন একটি এলাকায় ডাইভিং অনুসন্ধানের সময় নভেম্বর মাসে প্রবাল প্রাচীরটির অবস্থান জানা যায়। পুরো অভিযানটি ‘সিবেড ২০৩০ প্রজেক্ট’-এর অংশ।
ইউনেসকো ইতিমধ্যে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সমুদ্রের এত গভীরে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বড় প্রবাল প্রাচীর এটিই।
সংস্থাটির গবেষক ড. জুলিয়ান বারবাইরির মতে, হয়তো এমন বাসস্থান আরও অনেক আছে, যার সম্পর্কে আমরা এখনও জানি না। তবে বিশ্বব্যাপী প্রবাল প্রাচীরগুলোকে রক্ষার জন্য তাদের মানচিত্রের আওতায় আনতে হবে।
ইউনেসকোর ডিরেক্টর জেনারেল অউদ্রে আজউলেয় এই আবিষ্কারকে অবিশ্বাস্য বলছেন।
ফরাসী সমুদ্রতলের আলোকচিত্রী আলেক্সিস রোসেনফেল্ড বলেছেন, যতদূর চোখ যায় এই গোলাপের আকৃতির জাদুকরী এ প্রবাল প্রাচীর ততদূরই দেখা যায়। এটি অনেকটা শিল্পকলার মতো।
প্রফেসর মারি রবার্টস, এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিডিং মেরিন সায়েন্টিস্ট বলেছেন, ‘এই আবিষ্কারেই স্পষ্ট হয়, আমরা সমুদ্রের বিষয়ে কত কম জানি।
‘এত দিন ধরে আমরা ভেবেছিলাম এই প্রবাল প্রাচীরগুলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার অগভীর সমুদ্র উপকূলে হয়ে থাকে। কারণ গভীর জলের চেয়ে অগভীর জল দ্রুত উষ্ণ হয়। এ ছাড়া প্রবালের গায়ে লেগে থাকা শৈবালের আলো প্রয়োজন। কিন্তু সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গভীর সমুদ্রই ভবিষ্যৎ প্রবালের আশ্রয়স্থল। তাই এই স্থানগুলোর ম্যাপিং করতে, তাদের পরিবেশগত ভূমিকা বুঝতে এবং ভবিষ্যতে প্রবালগুলো রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে।’
তবে অতিরিক্ত গভীরতায় থাকায় প্রবাল প্রাচীরটি বেশ অক্ষতই আছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী মাসে সেখানে আরও অনুসন্ধান করা হবে।