সংবাদমাধ্যমের ওপর আবারও আগ্রাসন চালাল ভারত সরকার। এ ক্ষেত্রে তারা বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দোহাই দিয়েছে। কেন্দ্রশাসিত ভারতের জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন শ্রীনগরে অবস্থিত কাশ্মীর প্রেস ক্লাব দখল করে নিয়েছে।
প্রথমে প্রশাসন ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে। পরবর্তী সময়ে ক্লাবের জমি ও ভবনের সরকারি বরাদ্দ বাতিল করে ভবনটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এদিকে সরকারের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত কমিটি। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, সরকারের লক্ষ্য ছিল ক্লাবটি বন্ধ করা, কিন্তু এ পদক্ষেপ কাশ্মীরের সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না।
কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইশফাক তন্ত্রে বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা এ উপত্যকার একমাত্র গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন সাংবাদিক সংগঠন প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে অনুরণিত সাংবাদিকদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল।
তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের সাংবাদিকরা শিখা প্রজ্জ্বলিত রাখতে এবং সামনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যথেষ্ট সক্ষম এবং পেশাদার। আমি আবারও বলতে চাই যে কাশ্মীরে সাংবাদিকতা উন্নতি লাভ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে।’
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পরে দেশটি কেন্দ্রের শাসনে চলে যায়। কর্তৃপক্ষ সেন্ট্রাল সোসাইটি অফ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে কাশ্মীর প্রেস ক্লাবকে পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করতে বলে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পরে, সরকার সেন্ট্রাল সোসাইটি অফ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে কাশ্মীর প্রেস ক্লাবকে পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করতে বলে।
গত বছর মে মাসে কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন বর্ধিতকরণের আবেদন করে। রেজিস্ট্রার অফ সোসাইটিজ ২৯ ডিসেম্বর তাদের আবেদন মঞ্জুর করে।
তবে ১৪ জানুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের একটি রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়। এর পরদিনই কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে পুলিশ প্রেস ক্লাব ভবনের দখল নেয়।
পরবর্তী সময়ে সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৩০০-এর বেশি সাংবাদিকের সংগঠন কাশ্মীর প্রেস ক্লাবকে বিলুপ্ত ঘোষণা এবং ক্লাবকে দেয়া ভবন ও জমির বরাদ্দও বাতিল করা হয়।
স্থানীয় সংবাদপত্র 'কাশ্মীরওয়ালা'র সম্পাদক ফাহাদ শাহ বলেছেন, ‘সাংবাদিকতা এই অঞ্চলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত দুই বছরে সাংবাদিকদের ক্রমাগত তলব এবং আটকে রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকদের বাড়িতে ও অফিসেও একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কতটা নির্লজ্জভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে এবং আইনগুলোকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে জনগণকে এমন একটি লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করার জন্য যা সরকার স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কাশ্মীরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’
উল্লেখ্য , কাশ্মীরে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষদের গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলোকে অকেজো করে দিয়ে সেগুলোকে অস্তিত্বহীন ঘোষণা করার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন।
কাশ্মীর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্সের অনুসরণে প্রেস ক্লাব হলো সর্বশেষ স্বাধীন সামাজিক সংগঠন, যেখানে আগস্ট ২০১৯ সাল থেকে জোরপূর্বক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে বাধা দেয়া হয়েছিল।
শনিবারের ঘটনার পর এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে ভারতের প্রায় সব প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও সরকার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি।