মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী প্রমাণ হওয়ায় সিরিয়ান সেনাবাহিনীর এক কর্নেলকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে জার্মানির একটি আদালত।
আনোয়ার রাসলান নামের ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১১-২০১২ সালের মধ্যে ৫৮ জনকে হত্যার পাশাপাশি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়। একই সঙ্গে অন্তত চার হাজার বেসামরিক সিরিয়ান নাগরিককে দামেস্কের কুখ্যাত আল খাতিব কারাগারে আটকে ব্যাপক নির্যাতন করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, জার্মানির রাইন নদী ঘেঁষা শহরের কোবলেনজের আদালতে এসব প্রমাণ হয়। ৫০ জন সাক্ষী রাসলানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। আর এরই মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় মানবাধিকার প্রশ্নে বিদেশের মাটিতে কারও বিচার হলো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘৫৮ বছরের রাসলান সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভের সময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন।
‘অনেক বিক্ষোভকারী এবং আসাদ সরকারবিরোধী মনোভাবধারীদের সে সময় তিনি শক্ত হাতে দমন করেন। দামেস্কের কুখ্যাত ওই কারাগারে আটকে, অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো তাদের ওপর।’
যেভাবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাসলান
সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের একপর্যায়ে হাজার হাজার সিরীয় শরণার্থীর সঙ্গে জার্মানিতে মানবিক আশ্রয় নেন রাসলান। সেখানে ভালোই কাটছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০১৯ সালে। এ বছর জার্মান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
হত্যা, ধর্ষণ ও কারাগারে আটকে নিপীড়নের দায়ে আজীবন কারাদণ্ড পাওয়া সিরিয়ান কর্নেল রাসলান। ছবি: বিবিসি
যদিও শুরু থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন রাসলান। উল্টো দাবি করেন, আটকদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
সর্বজনীন এখতিয়ার
এই বিচারকে ব্যতিক্রম বলার অনেক কারণ আছে। কেননা সিরিয়া ভূখণ্ডে অপরাধের সাজা হয়েছে মানবিক আশ্রয় দেয়া কোনো দেশে।
বর্তমানে জার্মানিতে ৮ লাখ সিরীয় আশ্রিত। বিভিন্ন সময়ে এই বিপুল মানুষ ইউরোপের এই দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন। গৃহযুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই দেখে তাদের একটি দলের সঙ্গে কোনো এক সময় জার্মানি চলে আসেন রাসলান।
জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া সিরীয়দের পাশে দাঁড়ায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। তাদের কাছে আশ্রিতরা তুলে ধরেন নিজ দেশে নির্যাতনের করুণ চিত্র।
জার্মানির আইনজীবীরা বিষয়টি আদালতে তোলেন। এ জন্য জার্মান মানবাধিকার আইনজীবীরা সর্বজনীন এখতিয়ারের (ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন) নীতি প্রয়োগ করেন। এর ফলে এক দেশে সাধিত গুরুতর অপরাধ অন্য কোনো দেশ বিচার করা যায়।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই মামলার বাদীপক্ষ ছিল। রায়ের পর তারা জানিয়েছে, লাখ লাখ মানুষের ওপর নিপীড়ন এবং গণহত্যার বিচার নিয়ে কথা বলা বেশ কঠিন। তবে এই সাজা যেসব মানুষকে সাহস জোগাবে, যারা আসাদ শাসনের বিরুদ্ধে নীরব আছেন।