করোনার ওমিক্রন ধরনটি ইউরোপে বিদ্যুতের বেগে ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জঁ কাস্তেক্স। নতুন বছরের শুরুতেই এই ধরন ফ্রান্সেও তাণ্ডব চালাবে- এমন আশঙ্কা তার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার যুক্তরাজ্য থেকে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের ওপর কড়াকড়ি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ফ্রান্স। এই নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টা আগে বিদ্যুৎবেগে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি হারে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার দেশটিতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে ওমিক্রন আক্রান্তের মোট সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৯৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ জন্যই দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স।
তবে শুধু ফ্রান্সই নয়, এর আগে ওমিক্রন ঠেকাতে ইতালি, গ্রিস ও পর্তুগালও ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়ম-কানুন জারি করে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে কোনো ব্যক্তি ওই তিনটি দেশে প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরকে অবশ্যই করোনার নেগেটিভ সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টা আগে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জঁ কাস্তেক্স জানান, সম্ভাব্য নতুন ঢেউকে মোকাবিলা করার জন্য তারা যেসব বিধি-নিষেধ জারি করতে যাচ্ছেন তার মধ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অন্যতম।
এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের মধ্যে সময়সীমা আরও কমিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। আর গণপরিবহন ও রেস্তোরাঁয় প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্তত দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিরাই শুধু সুযোগ পাবেন। নতুন বছরের আগের দিন সন্ধ্যায় আনন্দ উদযাপন ও আতশবাজির কর্মসূচি এবার বাতিল করে দিয়েছে দেশটি।
জঁ কস্তেক্স জানিয়েছেন, নতুন ঢেউকে সামাল দিতে নতুন বছরের সূচণালগ্নেই নতুন আরও কিছু বিধি-নিষেধ জারি করা হবে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করোনার নতুন আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। জার্মানিতে ইতোমধ্যেই নতুন আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আয়রল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডের সরকারও নতুন ঢেউ সামাল দেয়ার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে।
ইউরোপে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮ কোটি ৯০ লাখের বেশি মানুষ। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৫ লাখের বেশি মানুষ।
ওমিক্রন ধরনটি এবার তাদের মাথাব্যাথার কারণ হয়েছে। জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লটারবাখ জানিয়েছেন, তারা এমন একটি অবস্থাকে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা আগে কখনোই ছিল না। দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ ওমিক্রন ধরনের ক্ষেত্রে ফ্রান্স, নরওয়ে ও ডেনমার্ক ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে আছে বলেও মন্তব্য করেছে।
শনিবার জার্মানিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে অন্তত ৪২ হাজার মানুষের শরীরে। তবে আগের দিনের তুলনায় তা কিছুটা কম। আগের দিন শুক্রবার দেশটিতে করোনা শনাক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল অর্ধ লাখের কাছাকাছি।
এদিকে, শনিবার এক ঘোষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৮৯টি দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আর কম্যুনিটি সংক্রমনের ফলে কিছু কিছু এলাকায় মাত্র দেড় থেকে তিন দিনের মধ্যেই সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, যে দেশগুলোতে বহু মানুষের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, সেখানেও দ্রুত ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। প্রশ্ন উঠেছে, ওমিক্রন কি প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরাজিত করতে পারে? বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি নিয়ে এখন গবেষণা করছেন।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন উদ্বেগজনক হারে সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই ধরন সম্পর্কে সামান্যই জানা গেছে।