আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর নতুন সরকারের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলছিল পশ্চিমা বিশ্ব। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে নেয়ার চেষ্টায় উভয় পক্ষই।
এর অংশ হিসেবে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই দিনের আলোচনায় মিলিত হয় যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান প্রতিনিধিদল। সম্মেলন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জব্দকৃত অর্থ ফেরত চেয়েছে তালেবান।
এ ছাড়া তালেবান নেতাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও আহ্ববান জানিয়েছে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করা সংগঠনটি।
সম্মেলনে তালেবান সরকারের প্রতিনিধি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ও আমেরিকার প্রতিনিধি ছিলেন আফগানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত থমাস ওয়েস্ট।
আফগানিস্তানে আমেরিকান সেনাদের প্রত্যাহারের পর তালেবানদের সঙ্গে আমেরিকার এই নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা হলো।
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনতে শুরু থেকেই দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দেশ হিসেবে তিনি পাকিস্তান সফর করেন। ইরানের সঙ্গেও তিনি উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও শুরু থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মুত্তাকি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে টুইট করেছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি। তিনি জানান, দুই দেশের প্রতিনিধিদল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানবিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং এবং নগদ সুবিধা প্রদান নিয়ে আলোচনা করেছে।
বালখি বলেন, তালেবান প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জব্দকৃত অর্থ ফেরত, কালো তালিকা বাতিল ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্ববান জানানো হয়েছে। মানবিক বিষয়গুলোকে রাজনীতির বাইরে রাখতেও দাবি জানায় তালেবান প্রতিনিধিদল।
যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে যেসব তালেবান নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তার মধ্যে তালেবান সরকারের প্রধান মোল্লা হাসান আখুন্দও রয়েছেন।
আখুন্দ তালেবানের অন্যতম পুরাতন সদস্য। ১৯৯৬ সালে তালেবানরা যখন প্রথম আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তখন তিনি সেই সরকারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরবর্তী সময়ে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ উমরের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক ছিল।
আফগান সরকারের সঙ্গে সংঘাত (২০০১-২০২১) চলাকালীন আখুন্দ তালেবানের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্ষদ শুরা কাউন্সিলের নেতৃত্বে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকাতেও তিনি রয়েছেন।
দ্বিতীয়বারের মতো আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯৫০ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংক আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ফলে আফগানিস্তানে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও নগদ আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা, সরকারি কর্মীদের বেতন না পাওয়া, অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির কারণে আফগানিস্তানে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, আফগানিস্তানের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ এই শীতেই চরম খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হতে পারে।
এমন অবস্থায় তালেবান দোহার আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
এই সম্মেলনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক শুরুর ঘোষণা দেয় তালেবান। গত অক্টোবরেও তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের প্রধান থমাস ওয়েস্ট জানিয়েছিলেন, ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন পেতে তালেবানকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। তালেবানকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে হবে। নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। পাশাপাশি তাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগের ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়াও দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদল জাপান ও জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।