লিবিয়ার প্রয়াত শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম গাদ্দাফির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাইফ গাদ্দাফিকে বুধবার নির্বাচনী লড়াইয়ে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাইফ গাদ্দাফিকে অন্যতম প্রধান পদপ্রার্থী বলে মনে করা হচ্ছিল। তাকে অযোগ্য ঘোষণার ফলে নির্বাচনকে ঘিরে লিবিয়ায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও তীব্র হলো।
সাইফ গাদ্দাফিকে অযোগ্য প্রার্থী ঘোষণার কারণ হিসেব নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০১৫ সালে রাজধানী ত্রিপলির একটি আদালত সাইফ গাদ্দাফির অনুপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২০১১ সালে তার পিতা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সাইফ গাদ্দাফি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিলেন বলে রায় দিয়েছিল ত্রিপলির আদালতটি। সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সাইফ।
জিনতান শহর থেকে ভিডিওলিংকের মাধ্যমে বিচারে অংশ নিয়েছিলেন সাইফ গাদ্দাফি। পিতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর পালানোর চেষ্টা করায় সাইফকে আটক করে জিনতান শহরে বন্দি রেখেছিল বিদ্রোহীরা।
লিবিয়ার আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন ৯৮ জন। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত গাদ্দাফিপুত্রসহ ২৫ প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
অযোগ্য ঘোষিতদের মধ্যে লিবিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলি জিদান ও সাবেক আইনপ্রণেতা নুরি আবুসাহমাইন অন্যতম পরিচিত মুখ।
তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক এসব সিদ্ধান্ত স্থগিত আছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রার্থীদের আপিল আবেদনের প্রেক্ষিকে চূড়ান্ত রায় দেবে লিবিয়ার বিচার বিভাগ।
ভোটের আইনগত ভিত্তি ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের যোগ্যতাসহ পুরো নির্বাচনী বিধিমালা নিয়েই ব্যাপক বিতর্ক চলছে লিবিয়ায়। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থিত লিবিয়া শান্তি প্রচেষ্টা।
উত্তর আফ্রিকার দেশটি মুয়াম্মার গাদ্দাফিপরবর্তী সময়ে প্রায় পুরো দশকজুড়েই সহিংস রাজনৈতিক টানাপোড়েনের শিকার।
নির্বাচন কমিশনের যোগ্য ঘোষিত অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধেও নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আব্দুলহামিদ আল-বেইবাহ সরকারপ্রধান পদে বহাল থাকার শর্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে না দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। লিবিয়ার প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনী আইন মোতাবেক ভোটের তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের নিয়ম থাকলেও সে নিয়ম মানেননি তিনি।
নির্বাচনে অংশ নেয়া আরেক উল্লেখযোগ্য প্রার্থী বিদ্রোহী কমান্ডার খলিফা হাফতার। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় তাকেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।
তা ছাড়াও ২০১৯-২০ সালে ত্রিপলিতে আক্রমণে চালিয়ে হাফতার যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা- দুটি বিষয়ই অস্বীকার করেছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।