পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ থেকে রকেটের জ্বালানি তৈরি করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। সহজ ভাষায় ‘মহাকাশে গ্যাসস্টেশন’ নির্মাণের নতুন পরিকল্পনায় হাত দিয়েছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মহাকাশে ভেসে বেড়ানো পরিত্যক্ত বস্তু, যেগুলো পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, সেগুলোকে নবায়ন করবে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠানটি; পরিণত করবে রকেটের জ্বালানিতে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর কক্ষপথ পুরোনো মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষে ভরে যাচ্ছে। মৃত উপগ্রহ আর খরচের তালিকায় চলে যাওয়া রকেটের যন্ত্রাংশ ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটে বেড়াচ্ছে।
দ্রুতবেগে ধাবমান এসব মহাজাগতিক বস্তু ঝুঁকি হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ও যোগাযোগে ব্যবহৃত স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের জন্য। কারণ এমন গতিতে ছুটে বেড়ানো ছোট একটি স্ক্রু, এমনকি রঙের কণাও আইএসএসের মতো স্থাপনার জন্য বড় বিপদের কারণ হতে পারে। ঝুঁকিমুক্ত নন সেখানে অবস্থান করা নভোচারীরাও।
গত সপ্তাহে মিসাইল ছুড়ে নিজেদের একটি স্যাটেলাইট ধ্বংস করেছে রাশিয়া। স্যাটেলাইটটির ধ্বংসাবশেষ এমনই বিপজ্জনক ও ছুটন্ত মহাজাগতিক নোংরার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ‘বিশ্বের সব দেশের জন্য সমান ঝুঁকিপূর্ণ’ ওই ধ্বংসাবশেষ।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে মহাকাশে, পরিত্যক্ত বস্তুগুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেলে কক্ষপথটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই অবস্থাটিকে বলা হয় ‘কেসলার ইফেক্ট’।
এমন পরিস্থিতিতে ‘ইন-স্পেস ইলেকট্রিক প্রোপালশন সিস্টেম’ নামে একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান নিউম্যান স্পেস। পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি অবস্থানে থাকা মহাকাশযানের আয়ু বাড়াতে, স্যাটেলাইটগুলো নড়াতে কিংবা কক্ষপথ থেকে সরাতে ব্যবহার করা হবে এ প্রযুক্তি।
এরপর এই প্রোপালশন সিস্টেমের জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারে মহাকাশে পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশকে গ্যাসে পরিণত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নিউম্যান স্পেস। এ লক্ষ্যে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে নিউম্যান।
এরই মধ্যে স্যাটেলাইটের সাহায্যে কীভাবে মহাকাশে পরিত্যক্ত বস্তু ধরা যায়, তা দেখিয়েছে জাপানের স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রোস্কেল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যানোরকস্ এসব ধ্বংসাবশেষকে কক্ষপথেই কেটে-ছেঁটে ছোট ছোট টুকরা করে সংরক্ষণ বা এক জায়গায় মজুতের পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে অত্যাধুনিক রোবট ব্যবহার করছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিজলুনার মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষকে গলিয়ে ধাতব রড তৈরির চেষ্টা করছে। এই ধাতব রডগুলোকেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে নিউম্যান স্পেসের প্রোপালশন সিস্টেম।