গত কয়েক বছরে আদালতের কোনো রায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এত মতানৈক্য দেখা যায়নি। যেমনটি দেখা গেছে, কাইল রিটেনহাউসের মামলায় রায় নিয়ে।
গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদবিরোধী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে দুই প্রতিবাদকারীকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তিনি। শনিবার আলোচিত এই মামলার রায়ে কাইলকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, মামলার রায় পড়ে শুনানোর সময় ১৮ বছর বয়সী রিটেনহাউস নিজেই অবাক হয়েছিলেন। কারণ হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে আনা গুরুতর পাঁচটি অভিযোগই খারিজ করে দেন বিচারক।
আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ২০২০ সালেই ১৭ বছর বয়সী রিটেনহাউস বলেছিল, ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট বিক্ষোভ চলার সময় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
একপর্যায়ে তাকে আক্রমণ করতে এলে নিজের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র বের করেন রিটেনহাউস। সে সময় আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালাতে বাধ্য হন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডের পর তার বিরুদ্ধে ওই পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল।
রিটেনহাউস বেকসুর খালাস পাওয়ার পর আদালতের বাইরে অপেক্ষমাণ শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদিরা তাদের গাড়ির হর্ন বিরামহীন বাজিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ জানালা দিয়ে চিৎকার করে বলেছে, ‘কাইলের মুক্তি দাও’ এবং ‘আমরা দ্বিতীয় সংশোধনীকে ভালোবাসি’।
মার্কিন সংবিধানে এই দ্বিতীয় সংশোধনীর মধ্য দিয়ে যেকোনো আমেরিকানকে আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র বহন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা এই রায়ে দারুণ খুশি হলেও বেজার হয়েছে আমেরিকার বড় একটি অংশ; যারা ব্ল্যাক লাইভ মেটার আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। রায় ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হয়েছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আদালতকক্ষের বাইরে রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে এভাবেই অনেকে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেছিলেন, রিটেনহাউসের কাছে থাকা অ্যাসল্ট রাইফেলটি ছিল অবৈধ। তা ছাড়া সেই সময়টিতে অস্ত্র বের করার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।
রিটেনহাউসের বিচার আবারও আমেরিকায় বন্দুক রাখা এবং ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার আইনগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে।
এই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে। কেউ বলছেন, রিটেনহাউস দেশপ্রেমিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই গুলি চালান তিনি। আবার কেউ বলছেন, রিটেনহাউস চাইলেই এই হত্যাকাণ্ড এড়াতে পারতেন।
রিটেনহাউসের খালাস দেয়ার বিরুদ্ধে উইসকনসিনের পোর্টল্যান্ড শহরে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ শুরু হলে সেখানকার পুলিশ এটিকে দাঙ্গা হিসেবে ঘোষণা করে।
বলা হচ্ছে, রিটেনহাউসের চালানো গুলিতে আহত ব্যক্তি গ্রসক্রুৎজ আদালতে বলেছেন, রিটেনহাউস গুলি চালানোর আগেই তিনি বন্দুক তাক করেছিলেন। এতেই রিটেনহাউসের পক্ষে রায় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।