বরুন ও প্রিয়াঙ্কা সম্পর্কে ভাই-বোন হলেও রাজনীতির জগতে ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। তবে একটি ইস্যুতে শনিবার দু’জন একই দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে।
বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী ও কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। লখিমপুর খেরি সহিংসতা ও কৃষক হত্যায় অভিযুক্ত অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্র। বর্তমানে জেলবন্দি আশিস মিশ্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘অনেকে সিনিয়র পদে বসে আমাদের আন্দোলনকারী কৃষকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে যে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তারই ফলস্বরূপ ৩ অক্টোবর লখিমপুর খেরিতে আমাদের পাঁচজন কৃষক ভাইকে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করা হয়। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি আমাদের গণতন্ত্রের কলঙ্ক। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার, যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করা যায়।
‘কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আগে নিলে সাতশ’র বেশি কৃষক এখনও বেঁচে থাকতেন।
‘কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা সব পুলিশ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
বছরব্যাপী বিক্ষোভের সময় যে কৃষকেরা মারা গেছেন তাদের পরিবারপিছু এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বিজেপির এই সাংসদ।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও নরেন্দ্র মোদীর কাছে লখিমপুর খেরি সহিংসতার জন্য দোষীদের বিচার এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সারাদেশে কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং নিহত কৃষকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন।
নরেন্দ্র মোদি শনিবার লখ্নউ সফর করেন। এখানে তিনি দেশের সব রাজ্যের ডিজিপিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। লখিমপুর খেরি সহিংসতায় অভিযুক্ত আশিষের বাবা প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র’রও ডিজিপি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অজয় মিশ্রের সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার না করে তাকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘লখিমপুর কৃষক হত্যাকাণ্ডে খাদ্যদাতাদের প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছিল তা সমগ্র দেশ দেখেছে। আপনি আরও জানেন যে কৃষকদের গাড়ি দিয়ে পিষে মারার প্রধান অভিযুক্ত আপনার সরকারের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ছেলে।
‘রাজনৈতিক চাপের কারণে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মামলায় বিচারের কণ্ঠস্বরকে প্রথম থেকেই চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল।’
নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের কৃষকদের প্রতি আপনার দায়িত্ব আপনি নিশ্চয়ই ভালো করে বুঝেছেন। গতকাল দেশবাসীকে উদ্দেশ করে আপনি বলেছেন, কৃষকদের স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে খাঁটি চিত্তে কৃষি আইন প্রত্যাহারের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের কৃষকদের প্রতি আপনার ভালো উদ্দেশ্য আছে বলেও জানান। যদি এটি সত্য হয়, তবে লখিমপুর কৃষক হত্যাকাণ্ডের দোষীদের বিচার করা আপনার জন্য সর্বোত্তম হওয়া উচিত।’
প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি এখনও আপনার মন্ত্রিসভায় তার পদে রয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির বাবার সঙ্গে এই সম্মেলনে মঞ্চ শেয়ার করলে নিহতদের পরিবারের কাছে স্পষ্ট বার্তা যাবে যে, যারা খুনিদের রক্ষা করেন, আপনারা এখনও তাদের পাশে আছেন। যা কিষাণ সত্যাগ্রহে শহীদ হওয়া ৭০০ জনের বেশি কৃষকের জন্য গুরুতর অপমান হবে। দেশের কৃষকদের প্রতি আপনার উদ্দেশ্য যদি সত্যিই পরিষ্কার হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার না করে তাকে বরখাস্ত করবেন।’