বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কৃষকের কাছে ‘হার’ মানলেন মোদি

  •    
  • ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ২০:৪১

টুইটারে কৃষি আইন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী হিন্দিতে লিখেছেন, ‘দেশের অন্নদাতাদের সত্যাগ্রহ অহংকারের মাথা নত করে দিয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়কে অভিনন্দন। জয় হিন্দ। জয় হিন্দের (ভারতের) কৃষক।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি আন্দোলনকারী কৃষকদের বাড়ি ও পরিবারে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

তবে আন্দোলনরত কৃষকদের নেতা রাকেশ টিকাইত বলেছেন, ‘আন্দোলন এখনই শেষ হবে না। সংসদে আইন প্রত্যাহার হলেই আমরা আন্দোলনের সমাপ্তি টানব। কারণ আইন প্রত্যাহারের বিষয়টি এখনও শুধু ঘোষণা পর্যায়ে রয়েছে।’

টিকাইত বলেছেন, ‘সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে সংলাপের পথও খোলা উচিত এবং এমএসপিসহ আমাদের অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

এদিকে গত এক বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা সম্মিলিত কিষান মোর্চা তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

মোর্চার পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৃষি আইন সংসদীয় পদ্ধতির মাধ্যমে প্রত্যাহার কার্যকর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করব। যদি আইন প্রত্যাহার হয়, তবে তা হবে ভারতের এক বছরের দীর্ঘ কৃষক সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয়। যে সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন প্রায় ৭০০ কৃষক। এই মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একগুঁয়েমি মানসিকতা দায়ী।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্মিলিত কিষান মোর্চা প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চায় যে কৃষকদের চলমান আন্দোলন শুধু তিনটি কালো আইন বাতিলের জন্যই নয়, সমস্ত কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের আইনি গ্যারান্টির জন্যও। কৃষকদের এই গুরুত্বপূর্ণ দাবি এখনও ঝুলে আছে। একইভাবে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।’

কৃষি আইন প্রত্যাহার ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিরোধী দলগুলোর নেতারাও। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী একের পর এক টুইট করে দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য এবং তার ‘পরিবর্তিত মনোভাব’ বিশ্বাস করা কঠিন।

এক টুইটে প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘এখন যখন আপনারা নির্বাচনে পরাজয় দেখতে শুরু করেছেন, তখন হঠাৎ করেই এই দেশের সত্য বুঝতে শুরু করেছেন। এই দেশ কৃষকের হাতে, এই দেশ কৃষকের, কৃষকই এই দেশের প্রকৃত তত্ত্বাবধায়ক এবং কোনো সরকারই কৃষকের স্বার্থকে চূর্ণ করে দেশ শাসন করতে পারে না।’

টুইটারে কৃষি আইন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী হিন্দিতে লিখেছেন, ‘দেশের অন্নদাতাদের সত্যাগ্রহ অহংকারের মাথা নত করে দিয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়কে অভিনন্দন। জয় হিন্দ। জয় হিন্দের (ভারতের) কৃষক।’

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেছেন, ‘তিনটি কালো কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা গণতন্ত্রের জয় এবং মোদি সরকারের ঔদ্ধত্যের পরাজয়। গত এক বছর ধরে আন্দোলন করা কৃষকদের ধৈর্যের জয় এটা। মোদি সরকারের অদূরদর্শিতা ও অহংকারে শত শত কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন, তা দেশ কখনো ভুলতে পারবে না।’

আম আদমি পার্টির নেতা এবং দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া বলেছেন, ‘কৃষক এবং কৃষকের আন্দোলনকে অভিনন্দন। এক বছরের দীর্ঘ অহিংস আন্দোলন স্বৈরাচারী সরকারকে মাথা নত করতে বাধ্য করেছে। শত শত কৃষকের আত্মবলিদানের সামনে মাথা নত করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এই আন্দোলনে যেসব কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছেও সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘ধনীদের দল বিজেপি জমি অধিগ্রহণ ও কালো আইন দিয়ে গরিব কৃষকদের ঠকাতে চেয়েছিল। পেরেক লাগিয়ে, চুল টেনে কার্টুন বানিয়ে, কৃষকের ওপর জিপ চালিয়ে আন্দোলন দমন করতে চাইলেও উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে সমাজবাদী পার্টির বিজয়যাত্রার জনসমর্থনের ভয়ে কালো আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। শতাধিক কৃষকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের কবে শাস্তি হবে বলুন বিজেপি।’ বিএসপি প্রধান মায়াবতী বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার বিলম্বে কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল। সকল কৃষককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কেন্দ্রীয় সরকার যদি আরও আগেই এই সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে দেশ অনেক ধরনের বিবাদ থেকে রক্ষা পেত।’

সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেস সভাপতি বিভি শ্রীনিবাস টুইট করেছেন, ‘কৃষকের জয়, একনায়কের পরাজয়।’

কী আছে তিন কৃষি আইনে

প্রথমটি: ‘কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন অ্যাক্ট’। এতদিন কৃষকরা (মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, এ রকম কয়েকটি রাজ্যে) স্থানীয় মান্ডিতে ফসল নিয়ে যেতেন। সেখানে ফুড করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম দামে (ন্যূনতম দাম নির্ধারণের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যাকে সরকার ও কৃষক উভয়পক্ষ মান্যতা দেয়) ফসল কিনে গুদামজাত করত। সেখান থেকে দেশের নানা প্রান্তে রেশন দোকানে পাঠানো হতো। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এই খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। ফুড করপোরেশন ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়ী মান্ডি থেকে ফসল কিনতে পারেন। কিন্তু ওই ন্যূনতম দামেই কিনতে হবে।

এই আইন বলছে, স্থানীয় মান্ডি থেকে বহুদূরে পণ্য বিক্রয়ের অধিকার দেয়া হলো। উৎপাদন শুরুর আগে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে যে মান ও দাম নির্ধারিত হবে সেই অনুযায়ী কৃষক কোম্পানির কাছে ফসল বিক্রি করবেন। কৃষিকাজে ঝুঁকি রয়েছে, বন্যা, খরা ইত্যাদি লেগে থাকে। সরকার নির্ধারিত দামে প্রতিবছর এই ক্ষতির অংশ ধরা থাকে। নতুন আইনে তার স্থান নেই।

দ্বিতীয়টি: ‘কৃষিপণ্যের পূর্বনির্ধারিত দাম সুনিশ্চিত করাসহ কৃষকের ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা অ্যাক্ট’।

এই আইনে কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা তেমন ফসল চাষেই বাধ্য হবেন। কোম্পানি বীজ, সার, কীটনাশক, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। চুক্তি হবে জমির মালিকের সঙ্গে। এই আইনে আছে, চুক্তিসংক্রান্ত কোনো মতান্তর হলে কৃষক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না। তাকে যেতে হবে সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে। সেখানে সমাধান না হলে এপেলেট অথরিটির কাছে। ওই কমিটিতে থাকবে কোম্পানির প্রতিনিধি।

তৃতীয়টি: ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধন) অ্যাক্ট’।

১৯৫৫ সালে ঘোষিত ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ তালিকা থেকে এবার ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, ডাল, শর্ষে, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আলু বাদ দেয়া হলো। এতদিন রাজ্য সরকার যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খরা, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির মতো বিপর্যয়ের সময় এইসব পণ্য গুদামজাত করার সর্বোচ্চ পরিমাণ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। এখন আর তা রইল না। কেন্দ্র, রাজ্য কোনো সরকারের হস্তক্ষেপ আর চলবে না।

আইন প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার পাঁচ ধাপ

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে আইনটি বাতিলের প্রস্তাব আনা হবে। এটি দেশটির পার্লামেন্টে পাস করা যেকোনো আইন প্রত্যাহার করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

প্রথমত, প্রস্তাব পাঠানো: আইন প্রত্যাহারসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

দ্বিতীয়ত, স্ক্রুটিনি: আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি অধ্যয়ন করে এবং সমস্ত আইনি দিক পরীক্ষা করে।

তৃতীয়ত, সংসদে প্রস্তাব উপস্থাপন: আইনটি যে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইন প্রত্যাহারের বিল সংসদে উত্থাপন করা হবে। চতুর্থ ধাপে- বিতর্ক ও ভোটাভুটি: তর্ক-বিতর্কের পর সংসদে বিলটির ওপর ভোট দেয়া হবে। আইন প্রত্যাহারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট হলে আইন প্রত্যাহার করা যাবে।

পঞ্চম ধাপে বিজ্ঞপ্তি: সংসদে আইন প্রত্যাহার বিলটি গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে আইনটি বাতিলের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর