স্কুলশিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তিউনিসিয়ার পার্লামেন্টের এক সদস্যকে (এমপি) এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এমন হয়রানির প্রতিবাদে মি টু হ্যাশ আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আরব বিশ্বের এই দেশটিতে।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী নাইমা চাববৌহ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা শুনানির পর এমপি জৌহায়ের মাখলুফকে অশালীন যৌন আচরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।’
অভিযোগে বলা হয়, উপকূলীয় শহর নাবিউলে একটি গার্লস হাই স্কুলের সামনে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এমপি জৌহায়ের মাখলুফ তার গাড়ি থামিয়ে যৌনকর্ম (হস্তমৈথুন) করছিলেন। এ সময় ওই শিক্ষার্থী এমপির ছবি মোবাইল ফোনে তুলে রাখেন। পরে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ছবি শেয়ার দেয় সেই ছাত্রী। আর এর পরই যৌন হয়রানি ও ওই এমপির বিরুদ্ধে উত্তাল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা আরব দেশটিতে।
উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ওই শিক্ষার্থী আরও জানিয়েছেন, সে ওই সময় একজন নাবালিকা ছিল, তাই সবকিছু তেমন বুঝত না। ছাত্রীটি আরও জানায়, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ওই এমপি গাড়িতে বসে তাকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন অশালীন ইঙ্গিত করতেন। পরে ওই শিক্ষার্থী ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে এবং আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অশ্লীল হামলার অভিযোগ তোলে।
তবে প্রথম থেকেই কলব তৌনেস পার্টি থেকে নির্বাচিত এই এমপি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। ৫৮ বছর বয়সী এই এমপি জানান, তিনি ডায়াবেটিকস আক্রান্ত। প্রস্রাবের বেগ সামাল দিতে না পেরে গাড়িতে থাকা পানির বোতলে তিনি প্রস্রাব করছিলেন।
যুগান্তকারী রায়টির মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সাজা পেতে হয়েছে।
মাখলুফের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার পর তার আইনপ্রণেতা পদের জন্যে তাকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
পরে বিক্ষোভ ও জনগণের চাপে আইনপ্রণেতাদের দায়মুক্তির সেই ক্ষমতা বাতিল করে দেয় দেশটির পার্লামেন্ট। এতে তাকে (এমপিকে) বিচারের আওতায় আনার পথ খুলে যায়।
নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেত্রীরা এমন রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী রায় বলে উল্লেখ করেন।
তিউনিসিয়াকে আরব বিশ্বে নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হিসেবে দেখা হয়। দেশটিতে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে পাবলিক স্পেসে বা প্লেসে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে আইন পাস হয়। এই আইনে প্রথম সাজা দেয়া হয়েছে এমপি মাখলুফকে।