জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনকে (কপ-২৬) ব্যর্থ আখ্যা দিয়েছেন জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আর ফাঁপা, অবাস্তব প্রতিশ্রুতির কোনো প্রয়োজন নেই।’
শনিবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনস্থলের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সুইডিশ কিশোরী থুনবার্গ। এসময় হাজারও জলবায়ুকর্মী গ্রেটার প্রতি সংহতি জানান।
বিক্ষোভরত কর্মীদের সামনে গ্রেটা বলেন, ‘ফাঁপা, ক্রটিপূর্ণ প্রতিশ্রুতির আর দরকার নেই, যা কি না ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনার দীর্ঘদিনের দাবি এবং জলবায়ু সম্পর্কিত ন্যায়বিচারকে উপেক্ষা করে।’
জলবায়ু সম্মেলনে উত্থাপিত প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করে গ্রেটা বলেন, ‘সম্মেলন থেকে আমরা যা পাচ্ছি তার সবই ফাঁপা। আর এগুলোই আমাদেরকে শোনানো হচ্ছে। সম্মেলনে যোগ দেয়া নেতারা জলবায়ুবিষয়ক বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক ঐক্যমতের দাবিকে উপেক্ষা করতে পারেন না। তারা তাদের সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তার কথাও ভুলে গেছেন।’
বক্তব্য শেষ করার আগে গ্রেটা প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
কপ-২৬ হলো ব্লা, ব্লা, ব্লা
গ্রেটা বলেন, ‘নেতারা কার্যকর কিছুই করছেন না। সম্মেলনে তারা আমাদের ব্লা, ব্লা, ব্লা বুঝিয়ে সময় পার করছেন। মনে হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। আর এর জন্যই তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।’
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনস্থলের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে জলবায়ুকর্মীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, ‘এবারের জলবায়ু সম্মেলন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বর্জনীয় ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। এটিকে একটি ‘গ্লোবাল গ্রিনওয়াশ উত্সব’, বড় ধরনের ‘ব্যর্থতা’ এবং একটি ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তিমূলক প্রচেষ্টা’ বলে মনে হচ্ছে।’
১৮ বছর বয়সী গ্রেটা বলেন, ‘জলবায়ু সংকট, বাস্তুসংস্থান বিষয়ক সংকট ও স্বাস্থ্য সংকট একসূত্রে গাঁথা। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্বে করোনাভাইরাস, জিকা, ইবোলা, ওয়েস্ট নাইল ফিবার, সার্স, মার্স, এইডসে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজের ধরন ও নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার কারণে রোগ সংক্রমণের পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের অত্যাচার আর আগ্রাসনের ফলে সংক্রমক রোগ এখন প্রাণী থেকে প্রাণীতে ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রাণী থেকে রোগ মানুষেও সংক্রমিত হচ্ছে।’
এসময় জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতাদের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়ে গ্রেটা বলেন, ‘গোটা পৃথিবীর জলবায়ু উন্নয়নে সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা চাই, ফাঁপা প্রতিশ্রুতি নয়।’
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী ও শিশুরা মূল ভুক্তভোগী উল্লেখ করে এই জলবায়ুকর্মী বলেন, ‘ঝুঁকি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার অংশীদারত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি আরও দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’