টক্সিক অপটিক নিউরোপ্যাথি রোগে ৪২ বছর বয়সে আক্রান্ত হন বারনা গোমেজ। এ রোগে চোখ ও মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত অপটিক নার্ভ দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি হারান বিজ্ঞানের শিক্ষক বারনা।
২০১৮ সালে ৫৭ বছর বয়সে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন বারনা। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার আশায় মস্তিষ্কে সরাসরি কৃত্রিম অঙ্গ বসাতে রাজি হন তিনি। এর আগে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সম্মত ছিলেন না।
সফল ওই অস্ত্রোপচারের একপর্যায়ে দ্বিমাত্রিক আকার দেখতে ও অক্ষর চিনতে দীর্ঘ ১৬ বছর পর সক্ষম হন বারনা।
সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা মস্তিষ্কে কৃত্রিম অঙ্গ বসানোর মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছেন।
অস্ত্রোপচারের সময় বারনার মস্তিষ্কে শখানেক ক্ষুদ্রাকৃতির সুচসহ ছোট ইলেকট্রোড প্রবেশ করানো হয়। ইলেকট্রোডটির আকার মুদ্রার চেয়ে বড় নয়। চার মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও চার মিলিমিটার প্রস্থের ওই ইলেকট্রোড মস্তিষ্কে বসানোর ছয় মাস পর ফের বের করা হয়।
মোরান করটিভিস প্রসথেসিস নামের ওই ইলেকট্রোড চোখ ও অপটিক নার্ভকে পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে সরাসরি ভিস্যুয়াল উপলব্ধির সোর্সে চলে যায়।
স্পেনে ওই অস্ত্রোপচারের পর ছয় মাস পর্যন্ত মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করাতে ও নতুন অঙ্গ নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে প্রতিদিন ল্যাবে চার ঘণ্টা সময় কাটাতেন বারনা।
ল্যাবে প্রথম দুই মাসে বারনা মাঝেমধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোর যেসব বিন্দু দেখতে পেতেন, তার সঙ্গে ওই কৃত্রিম অঙ্গের উদ্দীপনার মাধ্যমে সৃষ্ট আলোর বিন্দুর তুলনা করেন গবেষকরা।
বারনার কৃত্রিম অঙ্গের একটি ইলেকট্রোড যখন উদ্দীপিত হয়, তখন তিনি ফ্রসফিন নামে আলোর এক বিন্দু দেখতে পান বলে জানান। উদ্দীপনার শক্তির ওপর আলোর বিন্দু উজ্জ্বল বা ম্লান হয়।
দুটির বেশি ইলেকট্রোড একই সঙ্গে উদ্দীপিত হওয়ার সময় বারনা বুঝতে পারেন, আলোর বিন্দুগুলো দেখতে পারা সহজ হচ্ছে।
আশাব্যঞ্জক এসব ফলের পর ল্যাব পরীক্ষার শেষ মাসে কৃত্রিম অঙ্গের মাধ্যমে অক্ষর পড়তে সক্ষম হন বারনা।
বিভিন্ন প্যাটার্নে যখন ১৬টি ইলেকট্রোড একসঙ্গে উদ্দীপিত করা হয়, তখন আই, এল, সি, ভি, ও অক্ষর পড়তে পারেন বারনা। এমনকি বড় অক্ষরের ও এবং ছোট অক্ষরের ও-এর মধ্যে পার্থক্যও বুঝতে পারেন তিনি।