ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের অনুমতি দিয়েছে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থতা ও দেশজুড়ে বিপর্যয় ডেকে আনার মাধ্যমে তিনি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে মনে করেন আইনপ্রণেতারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান সিনেটররা। মানবতাবিরোধীসহ বলসোনারোর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ গঠনের আহ্বান জানানো একটি প্রতিবেদনে সমর্থন জানায় সিনেটের একটি প্যানেল।
তবে অন্যান্য ফৌজদারি অভিযোগের মতো বলসোনারোর বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগের বিচার হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ এর আগে প্রতিবেদনটিতে করা সুপারিশ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন ব্রাজিলের প্রসিকিউটর-জেনারেল অগাস্টো আরাস। তিনি প্রেসিডেন্টের স্বার্থরক্ষাই করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ব্রাজিলে করোনায় প্রাণহানি ছয় লাখ ছাড়িয়েছে চলতি মাসের শুরুতে। সংক্রমণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পর তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে ব্রাজিল; দুই কোটির বেশি মানুষের দেহে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটি।
এ অবস্থায় ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের পর তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য প্রধান কৌঁসুলির কাছে পাঠানো হবে। ব্রাজিলের প্রধান কৌঁসুলিও প্রেসিডেন্ট বলসোনারোরই নিয়োগপ্রাপ্ত।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা বা কথিত কোনো অপরাধেরই অভিযোগ স্বীকার করেননি বলসোনারো। তবে চলমান সংকটের জেরে তার জনসমর্থন তলানিতে ঠেকেছে।
এক হাজার ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে বলসোনারো ছাড়াও আরও ৭৭ জন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের প্রাপ্তবয়স্ক তিন ছেলেও আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মহামারির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব ভুলত্রুটির বলি হয়েছে লাখো মানুষ, সেসবের পেছনে দায়ী প্রধান ব্যক্তি’টি হলেন বলসোনারো।
অভিযোগ করা হয়, টিকা ছাড়াই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের আশায় বলসোনারো সরকারের মহামারিবিষয়ক নীতিমালায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ ছিল না। এর ফলে সারা দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
যখন কোনো জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের দেহে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে বা প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তখন গোষ্ঠীটি হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে বলে মনে করা হয়। হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের ফলে ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণের হার শূন্যের কাছাকাছি থাকে।
প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক মধ্যপন্থি সিনেটর রেনান ক্যালহেইরোজ। প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) জমা দিতে সিনেটের সংশ্লিষ্ট প্যানেলের প্রতি সুপারিশ করেছেন তিনি।