ভারত ও নেপালে ভয়াবহ বন্যায় গত পাঁচ দিনে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ১২৮ জনের। নিখোঁজ রয়েছে অনেক মানুষ।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা আর ভূমিধসে বিধ্বস্ত হয়েছে সড়ক, বাড়িঘরসহ বিপুলসংখ্যক স্থাপনা।
নিখোঁজদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন কিংবা পানির তোড়ে ভেসে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে গত তিন দিনে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। শুধু মঙ্গলবারই রাজ্যটিতে মারা গেছেন কমপক্ষে ৩০ জন।
প্রাণহানির বড় অংশই পর্যটন শহর নৈনীতালে হয়েছে। বড় ধরনের ভূমিধসে বাড়ি ভেঙে পড়ায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের। আলমোরা জেলায় বিশাল বিশাল পাথরের খণ্ড আর কাদার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন আরও পাঁচজন।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আবহাওয়া সতর্কতার পরিসর বাড়ায় ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। তারা জানিয়েছে, অঞ্চলটিতে আরও অনেক বেশি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় সোমবার ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টির পর বিপৎসীমা ছাড়িয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায় নৈনীতাল হ্রদের পানি।
ঋষিকেশে গঙ্গা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোসি নদী থেকে উপচে পড়া পানির ঢলে বিভিন্ন রিসোর্টে আটকা পড়েছেন শত শত পর্যটক।
এ অবস্থায় রাজ্যটির সব স্কুল বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি সব ধরনের তীর্থযাত্রা ও পর্যটনকেন্দ্রিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পর্বতারোহণ, ক্যাম্পিংসহ সব ধরনের রোমাঞ্চযাত্রা।
সব মন্দিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ স্থগিত রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বদ্রিনাথ চার ধাম যাত্রা। পথে থাকা বদ্রিনাথ মন্দিরগামী তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে।
ভূমিধসের ধ্বংসস্তূপ পড়ে থাকায় যান চলাচল বন্ধ বলে ৪৮ ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বদ্রিনাথ মহাসড়ক। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তীর্থযাত্রা স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি।
আর দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় শুক্রবার থেকে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৩৯ ছুঁয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজয়ন। এর মধ্যে বুধবার থেকে বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে বলে রয়েছে শঙ্কা।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্যের বড় অংশে দুই দিন ধরে জারি ছিল ইয়েলো অ্যালার্ট বা তৃতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। এটি একধাপ বাড়িয়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতায় উন্নীত করা হয়েছে বুধবার।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শবরীমালা মন্দিরে রাজ্যের সবচেয়ে বড় তীর্থোৎসব স্থগিত করা হয়েছে।
বন্যার তাণ্ডব চলছে প্রতিবেশী নেপালেও। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৪৩ জনের। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৩০ জন।
পুলিশের বুধবারের বিবৃতি উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশজুড়ে বন্যা হলেও সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে। অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশের মুখপাত্র বসন্ত কুনওয়ার জানান, অব্যাহত ভারী বৃষ্টির কারণে নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের একটি গ্রামে পৌঁছাতে পারছেন না উদ্ধারকর্মীরা। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সেতি নামের গ্রামটিতে দুই দিন ধরে পানিবন্দি ৬০ জন বাসিন্দা।
বাড়িঘরের পাশাপাশি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক সেতু ও সড়ক; ভেঙেও গেছে বেশ কয়েকটি। এতে নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ শস্য।
আগামী কয়েক দিনে দেশটিতে বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে প্রশাসন।
এ বছর বর্ষার মৌসুম পার হয়ে যাওয়ার পর অতিবৃষ্টি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ দুটিতে। আরব সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এমন পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।