সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভাজন সৃষ্টি, শিশুদের ক্ষতিসাধন, নিরাপত্তার চেয়ে মুনাফার প্রতি ঝোঁক, গণতন্ত্র দুর্বল করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গের ছবি নিজেদের সবশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদে ছেপেছে টাইম ম্যাগাজিন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জাকারবার্গের ছবিতে তার মুখের ওপর অ্যাপ ডিলিট করার আইকন বসিয়ে একটি ইলাস্ট্রেশন ছাপানো হয়, যেখানে লেখা ‘ডিলিট ফেসবুক?’ আর তার নিচে ‘ক্যানসেল’ আর ‘ডিলিট’ লেখা।
টাইম ম্যাগাজিন তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রচ্ছদের ছবি টুইট করে শিরোনামে লিখেছে, মুনাফার চেয়ে মানুষকে বেশি গুরুত্ব দেয়া টিমকে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ফেসবুক কীভাবে চিন্তার ওপর প্রভাব ফেলে।
ফেসবুক নিয়ে নিবন্ধে টাইম ম্যাগাজিন বিস্তারিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির সিভিক ইন্টেগ্রিটি টিম নিয়ে কথা বলেছে।
পাশাপাশি ভুল তথ্য ও বিদ্বেষমূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করা ওই টিমের বেশির ভাগ সদস্যের সঙ্গে জায়ান্ট কোম্পানিটির সিদ্ধান্তের ব্যাপক বৈসাদৃশ্য নিবন্ধটিতে তুলে ধরা হয়।
গত বছরের ডিসেম্বরে ওই টিমকে বিলুপ্ত করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ওই টিমে ছিলেন হুইসেলব্লোয়ার ও ফেসবুকের সাবেক প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সেস হাউগেন। সম্প্রতি তিনিই ফেসবুকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাজির করেন।
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধের লেখক বিলি পেরিগো বলেন, ‘ফেসবুকের আগামী নির্দেশনা কী হবে আমরা জানি না। তবে জায়ান্ট কোম্পানিটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে, তা বেশ পরিষ্কার।
‘হাউগেনের নথি ফাঁস ও সাক্ষ্যের পর কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ফেসবুককে আনার জোর দাবি তুলেছে মানুষ।’
বুধবার হুইসেলব্লোয়ার হাউগেনের অভিযোগ নাকচ করেন জাকারবার্গ।
তিনি বলেন, ‘ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের মুনাফার দিকে আমাদের ঝোঁক বেশি থাকার অভিযোগ সত্য নয়।
‘মানুষ খেপে যেতে পারে এমন কনটেন্ট আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি রাখি আর এসব থেকে আমরা মুনাফা কামাই, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘এমন কোনো প্রযুক্তি কোম্পানির কথা আমার জানা নেই যেটি মানুষকে রাগান্বিত বা বিষণ্ন করার মতো পণ্য তৈরি করার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ব্যবসা ও পণ্যের প্রণোদনার অবস্থান সব দিক থেকেই বিপরীতমুখী।’
এর আগে মঙ্গলবার সিক্সটি মিনিটস নামে সিবিএসের এক অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাউগেন ফেসবুকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তোলেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি তথ্যনির্ভর পরিবেশে আছি, যা ক্ষোভ, বিদ্বেষ এবং বিভেদের কনটেন্ট দিয়ে ভর্তি। এটি আপনার নাগরিক বিশ্বাসকে ক্ষয় করতে থাকে, একে অন্যের ওপর আস্থা নষ্ট করতে থাকে।
‘আমাদের একে অন্যের যত্ন নেয়ার ক্ষমতা কমাতে থাকে। ফেসবুকের যে সংস্করণটি এখন আছে সেটি আমাদের সমাজব্যবস্থাকে ছিঁড়ে ফেলছে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিগত সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে।’
এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ‘ফেসবুক ফাইলস’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ফাঁস হওয়া বিভিন্ন নথি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে আসছিল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এই নথিগুলো কে সংগ্রহ করেছিলেন সেটি অজানা ছিল।
সিক্সটি মিনিটসের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই ফেসবুকের নথি ফাঁসকারী হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন হাউগেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন চলার সময় ভুয়া তথ্যের প্রচার ঠেকাতে সাময়িকভাবে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু রেখেছিল ফেসবুক।
হাউগেন বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই তারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল অথবা সেটিংস পাল্টে আগের অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। এটি সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে আমি যেটা বারবার দেখেছি সেটা হলো, জনসাধারণের জন্য কোনটা ভালো আর ফেসবুকের জন্য কোনটা ভালো, এর মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। আর ফেসবুক প্রতিবারই আরও বেশি মুনাফা অর্জনের মতো নিজের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে।’