বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গোপন সম্পদ ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের তথ্য সম্প্রতি ফাঁস করে আলোড়ন তুলেছে প্যান্ডোরা পেপার্স। সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নামও প্যান্ডোরা পেপার্সে উঠে আসে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী বা আত্মীয়র নাম প্যান্ডোরা পেপার্সে না থাকলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক সহযোগীদের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ভাইঝি ও তার স্বামীর নাম রয়েছে।
আল-জাজিরার বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যান্ডোরা পেপার্সে নাম থাকায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার ভাইঝির বিরুদ্ধে দেশের বাইরে সম্পদ থাকার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের এ নির্দেশের তীব্র সমালোচনা করেছে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দল।
তাদের ভাষ্য, তদন্তের নামে কয়েক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা রাজাপাকসে পরিবারের দুর্নীতির অভিযোগ চাপা দেয়া হবে। এর মাধ্যমে সত্যের উদঘাটন হবে না।
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র দুলাস আলাহাপ্পেরুমা জানান, রাজাপাকসের ভাইঝি নিরুপমা রাজাপাকসে ও তার স্বামী থিরুকুমার নাদেসানের সম্পদের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৫৯ বছর বয়সী নিরুপমার আরেক চাচা শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মহিন্দ্র রাজাপাকসে। ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মহিন্দ্র শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নিরুপমা দেশটির সংসদ সদস্য ও উপমন্ত্রী ছিলেন।
বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশের ৩৩০ জনের বেশি রাজনীতিক ও উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার গোপন লেনদেন ও লুকানো সম্পদের তথ্য ফাঁস করে প্যান্ডোরা পেপার্স। রাজনীতিকদের মধ্যে ৩৫টি দেশের সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রনায়ক রয়েছেন।
এদের মধ্যে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, কোট ডে ভোয়া ও চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী, ইকুয়েডর, কেনিয়া ও গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট ও এল সালভাদর, পানামা, প্যারাগুয়ে ও হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট উল্লেখযোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ১ কোটি ১৯ লাখ আর্থিক লেনদেনের নথি পায়।
ওইসব নথিতে ১৪টি অফশোর সার্ভিস কোম্পানির ২.৯৪ টেরাবাইট তথ্য রয়েছে।
বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ৬০০-এর বেশি সাংবাদিক প্রভাবশালীদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও কর ফাঁকির নথিগুলো প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্লেষণ করছেন।
আইসিআইজের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজাপাকসের ভাইঝির স্বামী নাদেসানের ট্রাস্টের আর্থিক বিবরণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে ১৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অফশোর সম্পত্তি ছিল নিরুপমা ও নাদেসানের।
ওই দম্পতি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে আইসিআইজে।
অফশোরে সম্পদ থাকা বা শেল কোম্পানি ব্যবহার করা শ্রৗলঙ্কায় অবৈধ নয়। তবে এ ধরনের কিছু থাকলে স্থানীয় কর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিষয়টি জানাতে হবে বলে দেশটির আইনে বলা রয়েছে।