ইরানে এক আফগান শরণার্থী পরিবারে জন্ম মারজিয়া হামিদির। মা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে ওঠেন। ১৫ বছর বয়সে কী মনে করে একবার তায়কোয়ান্দো ক্লাসে ঢুকে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মার্শাল আর্টটির প্রেমে পড়ে যান মারজিয়া।
নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস করা শুরু করেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণ মেডেলও জেতেন মারজিয়া। স্বপ্ন, একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পদক জিতে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবেন।
তিন বছর আগে মারজিয়ার পরিবার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। তার বাবা ভিন দেশে শরণার্থী হয়ে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠছিলেন। ভাইয়ের কাবুলে লাভজনক ব্যবসা থাকায় মা-বাবার সঙ্গে দেশে ফেরেন মারজিয়া।
কাবুলে এসে তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণের ক্লাসে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়েন মারজিয়া।
আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমার পুরুষ কোচ সব সময় আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত। আমার এতে অস্বস্তি হতো।
‘ক্লাসের অন্য মেয়েদের মাথায় সব সময় স্কার্ফ থাকত। আমি স্কার্ফ পরতাম না বলে তারা আমার নামে নালিশ দিত।’
গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। অনেক আফগান তাদের সাফল্যের বিভিন্ন প্রতীক ধ্বংস বা লুকিয়ে ফেলেন, এ ভয়ে যে ওইগুলো তালেবানকে ক্রুদ্ধ করতে পারে।
১৯ বছর বয়সী মারজিয়ার জগৎও তালেবানের পুনরুত্থানে ওলট-পালট হয়ে যায়। বুঝে উঠতে পারেন না, কষ্টার্জিত পদকগুলো নিয়ে তিনি কী করবেন?
মারজিয়া বলেন, ‘তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আমার মেডেলগুলো রাখব না পুড়িয়ে ফেলব, এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ি। আমার ভাই তখন বলেন, মেডেলগুলো পুড়িয়ে ফেলার দরকার নেই। কোথাও লুকিয়ে রাখলেই চলবে।’
তবে মারজিয়া দ্রুতই বুঝতে পারেন, কেবল মেডেল লুকালেই হবে না, আরও অনেক কিছুই লুকাতে হবে তাকে।
গত মাসে অপরিচিত কয়েকজন মারজিয়ার খোঁজে তার বাড়িতে আসেন। মারজিয়ার ধারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া পোস্টের কারণে ওই ব্যক্তিরা এসেছিলেন। বাড়িতে না পেয়ে ওই ব্যক্তিরা তার ভাইয়ের অফিসেও যান।
এরপরই আত্মরক্ষার স্বার্থে লুকানোর সিদ্ধান্ত নেন মারজিয়া। এখন তিনি বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন।
এ ছাড়া ২০ হাজারের বেশি ফলোয়ার থাকা মারজিয়ার ইনস্টাগ্রামের ছবি এখন কালো রঙে ঢাকা। ছবিতে তিনি কালো আবায়া বা বোরকার সঙ্গে হিজাব পরেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ফের শুরু করতে চাই, কিন্তু তা এ দেশে হবে না। এ জন্য আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। নিজেকে ২০২৪ সালের অলিম্পিক গেমসের জন্য প্রস্তুত করতে চাই। ইরানে ফেরার ইচ্ছা নেই। শরণার্থীদের অবস্থা সেখানে ভালো নয়। ইরানে আমাদের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করা হয়।
‘আমি যদি তায়কোয়ান্দো খেলায় সেরা হই, তাহলেও ইরান আমাকে অলিম্পিকে অংশ নিতে দেবে না।’
মারজিয়া একা তালেবানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন না। তার মতো দশা এখন অনেক আফগান নারী-পুরুষের।
ক্ষমতায় আসার পর তালেবান ‘ইসলামি আইন অনুযায়ী’ নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার অঙ্গীকার করলেও উল্টো পথে হাঁটছে তারা।
মাধ্যমিক স্কুলে নারী শিক্ষার্থীদের যেতে বারণ করেছে তালেবান। পাশাপাশি অনেক নারী কর্মস্থলে ফিরতে জটিলতার মুখে পড়ছেন। কেবল স্বাস্থ্য খাতে আফগান নারীরা আগের মতো কাজ করতে পারছেন।