ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জার পাদ্রিরা ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে দুই লাখের বেশি শিশুকে যৌন নির্যাতন করেন। মঙ্গলবার ওই গির্জার স্বাধীন এক তদন্ত কমিটি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা অপরাধীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫০ সাল থেকে ক্যাথলিক গির্জাটির পাদ্রিরা প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার শিশুকে যৌন নির্যাতন করেন, যাদের বেশির ভাগই ছেলে। এই ছেলেদের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তদন্তে উঠে আসা তথ্যে ‘গভীরভাবে বেদনাহত’ হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ভ্যাটিক্যান সিটি।
ক্যাথলিক পাদ্রিদের নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সংগঠন লা প্যারোল লিবেরির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাসোয়া দেভক্স বলেন, ‘গির্জার পাদ্রিরা বিশ্বাস, আস্থা ও শিশুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
গির্জা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব অপরাধের জন্য আপনাদের অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
পারলার এ রেভিভার নামের আরেক সংগঠনের প্রধান ও পাদ্রিদের নির্যাতনের শিকার অলিভিয়ের সাভিগনেক প্রতিবেদনটিকে ‘ভূমিকম্প’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল কয়েক হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয় নয়। প্রতিটি শিশু ওই সময় যে পরিমাণ যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে, তার ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগবে।’
এর আগে সামনের বছর থেকে নির্যাতিতদের ‘আর্থিক সহায়তার’ পরিকল্পনা ঘোষণা করে ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জা।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ পাদ্রি শিশু নির্যাতনে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে ক্যাথলিক স্কুলের শিক্ষকও রয়েছেন। আর নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত যেতে পারে।
২০১৮ সালে ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে পুলিশ, আদালত ও গির্জার রেকর্ড এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতিতদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রায় আড়াই হাজার দীর্ঘ প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়।