কাবুলে এসে তালেবান সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে গেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিশেষ এক দূত। তাতে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে লন্ডন সম্পর্ক গড়তে পারে বলে ইঙ্গিতও মিলেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ সংবাদ দিয়েছে আল-জাজিরা। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাবুলে মঙ্গলবার তালেবান সরকারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বারাদার ও আব্দুল সালাম হানাফির সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটিশ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিমন গ্যাস।
বৈঠকে চলমান পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের মানবিকসংকট, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং যারা দেশ ছাড়তে চান তাদের সহযোগিতা করা বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বলে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, বৈঠকে আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুদের প্রতি নজর দেয়া এবং নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চান তাদের নিরাপদে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা বিধানে যুক্তরাজ্য সরকার সম্ভাব্য সব করবে। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের জনগণের পাশে থাকার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে সিমন গ্যাসের সঙ্গে ছিলেন দোহায় যুক্তরাজ্যের আফগানিস্তান মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স।
তবে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বালকি জানালেন অন্য কথা। বলেছেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায় তাই ছিল বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়।
আব্দুল কাহার জানান, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চান, তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ‘গঠনমূলক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করুক।'
তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য প্রতিনিধিদের এই বৈঠককে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন কাবুলে আল-জাজিরার সাংবাদিক স্টেফানি ডেকের। তার মতে, এই বৈঠকের ফলে যুক্তরাজ্য ও তালেবানের মধ্যে ‘উন্মুক্ত যোগাযোগের’ রাস্তা তৈরি হলো।
দুই দশক পর আবার আফগানিস্তান দখল করে তালেবান জানিয়েছিল, তারা ২০ বছর আগের অবস্থানে নেই। সহনশীলতার কথা বলেছিল কট্টর ইসলামি গোষ্ঠীটি। শত্রুদের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা জানায় তারা। সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আশ্বাস দেয়। সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখারও ইঙ্গিত দেয়।
তালেবানের এসব আশ্বাসের বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে বেশির ভাগ সদস্যই পশতু জাতিগোষ্ঠীর; মন্ত্রিসভায় নেই কোনো নারী সদস্য। এমনকি নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মানা করে দিয়েছে তারা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিশ্বের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়। সেই সঙ্গে পর্যুদস্ত অর্থনীতি চাঙা করা, কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনোটিই পারছে না তালেবান সরকার।