স্বচক্ষে কোনো মানসিক চাপযুক্ত ঘটনার সাক্ষী হলে তা বিষণ্নতায় ভোগার কারণ হতে পারে। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে টোকিও ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্সের গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
ভাইস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণার জন্য একটি খাঁচায় বড় ও ছোট দুটি ইঁদুর আটকে রাখা হয়েছিল। এরপর ছোট ইঁদুরটিকে জোর করে বড় ইঁদুরটির এলাকায় ঢুকতে বাধ্য করেন বিজ্ঞানীরা। এতে বড় ইঁদুরটি নিজের জায়গা বাঁচাতে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
গত মাসে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী বিহেইভিয়ারাল ব্রেইন রিসার্চে প্রকাশিত মূল গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, খাঁচার ভিতরে কী ঘটছে না ঘটছে- সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না।
কিন্তু এ বিষয়ে বাইরে থাকা তৃতীয় একটি ইঁদুরের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, তা জানার চেষ্টা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
দেখা গেছে যে খাঁচার ভেতরে দুই ইঁদুরের যুদ্ধ দেখে বাইরের তৃতীয় একটি ইঁদুরের মধ্যে বিষণ্নতার উপসর্গ তৈরি হয়েছে। কারণ দুর্বল ইঁদুরটির জন্য বাইরের ইঁদুরটির মধ্যে সহানুভূতি জন্মেছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ও ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক আকিয়োশি সাইতোহ বলেন, ‘আমি চাই যে মানুষ বুঝুক, মানসিক চাপ শুধু বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের মস্তিষ্কেই প্রভাব ফেলে না, তেমন কিছু দেখা বাকিদের মনেও একই রকম চাপ তৈরি করে।’
১০ দিন ধরে দুই ইঁদুরের দ্বন্দ্ব দেখার পর তৃতীয় ইঁদুরটির মধ্যে ‘প্রবল সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধের অনুভূতি’ তৈরি হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘সোশ্যাল ডিফিট মডেল’।
সাইতোহ বলেন, ‘ইঁদুর বেশ সামাজিক একটি প্রাণী। অথচ এ ঘটনায় আমরা দেখেছি যে তৃতীয় ইঁদুরটি অন্য ইঁদুরদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়।’
তৃতীয় ইঁদুরটি আনন্দ উপভোগের ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইঁদুরের সামনে ঘামের পানি ও সাধারণ খাবার পানি রাখা হলে সে প্রায় সবসময় মিষ্টি পানি বেছে নেবে। কারণ সেটি বেশি সুস্বাদু। কিন্তু এক্ষেত্রে সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভোগা তৃতীয় ইঁদুরটি তা করেনি। এর অর্থ হলো তার আনন্দের অনুভূতি ম্লান হয়ে গিয়েছিল।’
এখানে উল্লেখযোগ্য হলো যে ইঁদুরটির মস্তিষ্কের ‘হিপোক্যাম্পাস’ অংশে নিউরন তৈরির পরিমাণও কমে গিয়েছিল। মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশ শেখা ও আবেগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
গবেষকরা মনে করেন, এটি বিষণ্নতা তৈরির অন্যতম কারণ।
মানুষের সঙ্গে ইঁদুরের তুলনা অসঙ্গতিপূর্ণ হলেও ‘সোশ্যাল ডিফিট মডেল’-এর মতো কৌশলগত বিষয়ে মানসিক সুস্থতার প্রশ্নে মানুষের সঙ্গে ইঁদুরের সাদৃশ্য তাৎপর্যপূর্ণ।