বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা সনদটি বিশ্বের প্রাচীনতম বা অটোমান সাম্রাজ্যের নয়

  •    
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:০৩

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন যে ভাইরাল ছবিটি টিকা সনদ হলেও সেটি সরবরাহের সময়কাল ১৯০৬ সাল। অর্থাৎ ভাইরাল ছবিতে টিকা সনদটি ১৭২১ সালের বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা সত্য নয়। ১৯০৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের টিকাবিষয়ক নথির উদাহরণ দিয়ে রাটগার্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক নুখেত ভার্লিক বলেন, ‘টিকা সনদটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের প্রাচীনতমও নয়।’

‘বিশ্বের প্রাচীনতম টিকা সনদ ১৭২১ সালের’- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন দাবি সম্বলিত একটি ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।

ফেসবুক পোস্টটির সঙ্গে একটি নথির ছবি যুক্ত করা হয়েছে। নথিটিতে ‘ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট’ কথাটি ফরাসি ভাষায় লেখা, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় টিকা সনদ। নথির বাকি সব তথ্য লেখা হয়েছে অটোমান টার্কিশ ভাষায়।

নথির ছবিটি ফেসবুকে প্রথম ছড়ায় ১৫ সেপ্টেম্বরের একটি পোস্ট থেকে, যেটির ক্যাপশন লেখা হয়েছিল ইন্দোনেশীয় ভাষায়। সেখানে লেখা ছিল, ‘বিশ্বের প্রাচীনতম টিকা সনদ এটি, যা দেয়া হয়েছিল ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন অটোমান টার্কিশ ইসলামিক খেলাফত কর্তৃক সনদটি সরবরাহ করা হয়েছিল। ইসলামিক সভ্যতা এত আধুনিক ছিল যে সে আমলেও টিকা সনদের প্রচলন ছিল।’

মধ্যপ্রাচ্যের আংশিক, ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলজুড়ে ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসন বহাল ছিল। ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র ঘোষণার আগ পর্যন্ত ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের মেয়াদ।

পরে ফেসবুকের আরও বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি প্রকাশ করা হয়। ৮৩০ বারের বেশি শেয়ার করা হয় পোস্টগুলো। টুইটার আর টিকটকেও ভাইরাল হয়েছে ছবিটি।

কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে ছবির ক্যাপশনটিতে থাকা তথ্য মিথ্যা বলে জানানো হয়েছে।

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করেছেন যে ভাইরাল ছবিটি টিকা সনদ হলেও সেটি সরবরাহের সময়কাল ১৯০৬ সাল। অর্থাৎ ভাইরাল ছবিতে টিকা সনদটি ১৭২১ সালের বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা সত্য নয়।

ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার স্কুল অফ মিডল ইস্টার্ন অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকান স্টাডিজের পরিচালক ও ইতিহাসের অধ্যাপক বেঞ্জামিন ফোর্টনা জানান, সনদের একদম নিচে যে বছরের কথা উল্লেখ আছে, সেটি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৯০৬ সাল।

তিনি বলেন, ‘নথির শেষে থাকা তারিখটি রুমি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৭ আগস্ট, ১৩২২। রুমি ক্যালেন্ডার হলো সূর্যকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ করার হিসাব অনুযায়ী অটোমান সাম্রাজ্যের প্রণীত প্রশাসনিক বর্ষপঞ্জি।’

অনলাইনে টার্কিশ হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির (তুর্ক তারিহ কুরুমু) বর্ষপঞ্জি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে অধ্যাপক ফোর্টনা জেনেছেন, আধুনিক বর্ষপঞ্জির হিসাবে টিকা সনদে উল্লেখিত সালটি যে ১৯০৬, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ গুয়েলফের ইসলামিক অ্যান্ড মিডল ইস্ট হিস্ট্রির সহযোগী অধ্যাপক রেনে উরিঙ্গার। অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটি বইও লিখেছেন তিনি।

অধ্যাপক উরিঙ্গার বলেন, ‘সনদের নিচে উল্লেখিত ১৩২২ সালটি সম্ভবত গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৯০৬ সাল হবে।’

একই মত যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে অবস্থিত রাটগার্স ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং অটোমান সাম্রাজ্যবিষয়ক গবেষক ও লেখক নুখেত ভার্লিকেরও।

ভার্লিক জানান, সনদে উল্লেখিত লেখা থেকে আভাস মেলে যে এটির গ্রহীতা ছিলেন বর্তমান ইস্তাম্বুলের তৎকালীন বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী এক গ্রিক অর্থোডক্স যুবক। তৃতীয় ডোজ নেয়ার পর তাকে টিকা সনদটি দেয়া হয়। কিন্তু কোন রোগ প্রতিরোধে তিনি টিকাটি নিয়েছিলেন, সেটির উল্লেখ নেই সনদে।

ভার্লিক বলেন, ‘আমরা জানি যে ওই সময় গুটিবসন্ত, প্লেগ, কলেরা, টাইফয়েড, জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে টিকা দেয়ার প্রচলন ছিল।’

১৯০৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের টিকাবিষয়ক নথির উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘টিকা সনদটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের প্রাচীনতমও নয়।’

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অবস্থিত ইহুদি জাদুঘরের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রাচীনতম টিকা সনদটি তাদের কাছে সংরক্ষিত। বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রে ১৮৪৪ সালে সনদটি ইস্যু করা হয় সেখানকার এক ব্যক্তির নামে। তিনি বসন্ত রোগের টিকা নিয়েছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর