উমিনো সুমিয়ামা ও কুমি কোদামার জন্ম ১৯১৩ সালের ৫ নভেম্বর। বর্তমানে তাদের বয়স ১০৭ বছর ৩২০ দিন।
জাপানের এই দুই যমজ বোনকে বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত ‘আইডেনটিক্যাল টুইনস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। জাপানজুড়ে পালিত প্রবীণদের শ্রদ্ধা দিবস উপলক্ষে সোমবার আসে এ ঘোষণা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শোদোশিমা দ্বীপে জন্ম দুই বোনের। ১১ ভাইবোনের মধ্যে তারা তৃতীয় ও চতুর্থ।
প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের পর দুই বোন আলাদা হয়ে যান। সে সময় গৃহকর্মী হিসেবে কোদামাকে দক্ষিণের প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর ওইতায় পাঠানো হলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হন তিনি। পরে সেখানেই বিয়ে করে স্থায়ী হন কোদামা।
অন্যদিকে জন্মস্থানেই থেকে যান সুমিয়ামা, সেখানেই বেড়ে ওঠেন এবং বিয়ে করেন।
জীবনের শুরুতে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সুমিয়ামা ও কোদামার শৈশব ছিল কঠিন। তার ওপর সে সময় জাপানের সমাজে যমজ শিশুদের নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল বলে নিয়মিত হয়রানির শিকার হতেন তারা।
প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দুই বোনের মধ্যে দেখা হতো না বললেই চলে। ৭০ বছর বয়সে তারা এক সঙ্গে বিভিন্ন তীর্থযাত্রায় যেতে শুরু করেন। নতুন করে যোগাযোগ শুরু আর দীর্ঘসময় একসঙ্গে থাকা বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে তাদের জন্য।
তবে এখন তারা নিজ নিজ এলাকায় আলাদা প্রবীণনিবাসে বাস করছেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে দুই বোনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির সনদ তাদের নিজ নিজ প্রবীণনিবাসের ঠিকানায় পাঠিয়েছে গিনেস কর্তৃপক্ষ।
গত ১ সেপ্টেম্বর সুমিয়ামা ও কোদামার বয়স ১০৭ বছর ৩০০ দিন হয়। সেদিনই গিনেসে আগের দুই প্রবীণতম জীবিত ‘আইডেন্টিক্যাল টুইনস’ কিন নারিতা ও জিন কেনির রেকর্ড ভেঙে দেন সুমিয়ামা ও কোদামা।
২০০০ সালের জানুয়ারিতে কিনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিশ্বের প্রবীণতম আইডেন্টিক্যাল টুইনসের রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন কিন-জিন। রেকর্ডের সময় তাদের বয়স ১০৭ বছর ১৭৫ দিন ছিল বলে জানিয়েছে গিনেস কর্তৃপক্ষ। তারাও জাপানের নাগরিক। ২০০১ সালে ১০৮ বছর বয়সে মারা যান জিনও।
কিন ও জিন জন্মেছিলেন জাপানের নাগোয়ায়, ১৮৯২ সালের ১ আগস্ট। জীবদ্দশার শেষ দশকে রীতিমতো তারকাখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন তারা।
আইডেন্টিক্যাল বা মনোজায়গোটিক টুইনস বলতে বোঝানো হয় সেই যমজদের, একই নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভক্ত হয়ে যাদের জন্ম। আইডেন্টিক্যাল টুইনসদের লিঙ্গ ও জিনগত বৈশিষ্ট্য এক হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুষ্কালের দেশ জাপান। বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত ব্যক্তির রেকর্ডও জাপানের। ১১৮ বছর বয়সী জাপানি নারী কানে তানাকা ধরে রেখেছেন এ রেকর্ড।
জাপানে প্রবীণ ব্যক্তিরা ভীষণ শ্রদ্ধার পাত্র। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রবীণ জনগোষ্ঠীর দেশ এটি। সাড়ে ১২ কোটি মানুষের জাপানে প্রায় ২৯ শতাংশেরই বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এদের মধ্যে শতবর্ষীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫১০ জন। এদের অর্ধেকেরই বয়স ১০০ বছর পেরিয়েছে চলতি বছরে।