এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা চুক্তি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। চীনের আঞ্চলিক আধিপত্য রোধের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে ঐতিহাসিক চুক্তিটিকে।
‘অকাস প্যাক্ট’ হিসেবে পরিচিত চুক্তিটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ নির্মাণের সুযোগ পেতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও অকাস চুক্তির আওতাভুক্ত। এ চুক্তি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী তিন দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষামূলক অংশীদারত্ব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চুক্তিটিকে ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চরম ঝুঁকির মুখে পড়ল এবং অস্ত্রের প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করল।’
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোকে ‘স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ও আদর্শগত কুসংস্কারের ধারক’ বলে সমালোচনা করেছে।
চুক্তিটি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অকাস প্যাক্টের কারণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১২টি ডুবোজাহাজ তৈরির চুক্তি হারিয়েছে ফ্রান্স। চুক্তিটির অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্য-ইভস লে ড্রিয়ান বলেন, ‘আমাদের পিঠে ছুরি মারা হয়েছে।’
বুধবার একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ চুক্তির ঘোষণা আসে। এতে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
চুক্তিতে সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে তিন নেতাই বারবার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে চলেছে বলে উল্লেখ করেছেন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সামরিক বাজেট তৈরি করছে চীন। দেশটির নৌ ও বিমানবাহিনী খুব দ্রুত শক্তিশালী হয়ে চলেছে। বিতর্কিত কয়েকটি অঞ্চলে আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করছে তারা। সেসব অঞ্চলে আমাদের মিত্র দেশগুলো নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চায়।’
গত কয়েক বছরে দক্ষিণ চীন সাগরসহ বেশ কিছু বিতর্কিত অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে আধিপত্য তৈরির অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন দেশ।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে এবং হাজারো সুদক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিরাপত্তা ইস্যুতে সবচেয়ে বড় অংশীদারত্বে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া।
ত্রিদেশীয় চুক্তিটি সামরিক সক্ষমতাকেন্দ্রিক। নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ পাঁচ দেশের গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগিবিষয়ক ফাইভ আইস ইন্টেলিজেন্স থেকে আলাদা হবে অকাস প্যাক্ট।
অকাসের মূল ভিত্তি অস্ট্রেলিয়ার ডুবোজাহাজ হলেও সাইবার সক্ষমতা ও সাগরের তলদেশভিত্তিক প্রযুক্তিও এ চুক্তির অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক।