আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বারাদার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে হাজির হয়ে জানিয়েছেন, তিনি সুস্থ আছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনলাইনে বুধবার প্রকাশিত ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি। বারাদারের একটি ভিডিও ধারণের পর তা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে।
দলীয় অন্তঃকোন্দল ও সংঘাতে বারাদার আহত হয়েছেন বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা সত্য নয় বলে ভিডিওতে বলতে শোনা যায় তালেবান সরকারের উপ-প্রধানকে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য নয়; আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ বিতর্কের খবর প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কিছু ঘটেনি। এসব সত্য নয়।’
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরটিএকে সাক্ষাৎকারটি দেন বারাদার। পরে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রকাশ করা হয়।
সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে বারাদারকে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সামনে একটি সোফায় বসে থাকতে দেখা যায়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর হাতে আরটিএর লোগো সম্বলিত মাইক্রোফোন ছিল।
ভিডিওতে বারাদারকে একটি কাগজে লেখা কথা পড়ে শোনাতে দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘দুশ্চিন্তা করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
এর আগে টুইটারে তালেবানের সংস্কৃতিবিষয়ক কমিশনের এক মুখপাত্র আরটিএ টিভিতে বারাদারের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হবে বলে জানান। ‘শত্রুপক্ষের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করা হবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বারাদার আহত বলে গুঞ্জন শুরুর পর থেকেই এ খবর মিথ্যে বলে বারবার দাবি করছিলেন তালেবান নেতারা।
এর আগে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের কৃতিত্ব নিয়ে শাসক দল তালেবান বড় ধরনের অন্তর্কোন্দলে জড়িয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
বলা হয়, কাবুলে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রীতিমতো ঝগড়া ও বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। গত সপ্তাহে ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের সঙ্গে বিবাদে জড়ান মন্ত্রিসভার এক সদস্য। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তর্কের একপর্যায়ে পরস্পরের প্রতি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও করেন তারা।
তালেবানের অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি পশতু জানিয়েছে, বারাদারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন নতুন তালেবান সরকারের শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রী ও নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা খলিল উর-রহমান হাক্কানির। কাতারে কর্মরত এক জ্যেষ্ঠ তালেবান সদস্য ও বিবদমান দুই নেতার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিও বারাদার ও খলিল হাক্কানির বিবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের প্রায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় কট্টরপন্থি তালেবান, দেশকে ঘোষণা করে ‘ইসলামিক আমিরাত’ হিসেবে। সম্ভাব্য সরকারপ্রধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা আব্দুল গনি বারাদারের বদলে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী করা হয় জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে। বারাদার হন আখুন্দের উপপ্রধান।
সরকারের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান বারাদার।
গত রোববার কাবুল সফররত কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করে তালেবান সরকার। সে বৈঠকেও ছিলেন না বারাদার।
সদ্য প্রকাশিত ভিডিওতে কারণ হিসেবে বারাদার জানান, ওই বৈঠকের সময় সফরে ছিলেন তিনি এবং ঠিক সময়ে কাবুলে ফিরতে পারেননি।
গুঞ্জন রটেছিল, তালেবানের মন্ত্রিসভায় থাকা হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যদের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরেই প্রকাশ্যে আসছেন না বারাদার। আফগানিস্তানের পাকিস্তান সীমান্তে সক্রিয় তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সব আত্মঘাতী হামলার অভিযোগ রয়েছে।
তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ছোট ভাই আনাস হাক্কানিও বুধবার টুইটারে বিবৃতি দিয়ে বারাদারের সঙ্গে বিবাদের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।