দারিদ্র্য ও ক্ষুধায় জর্জরিত আফগানদের জন্য ১১০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের শাসনে আফগানিস্তানে শরণার্থীর ঢল সৃষ্টির আশঙ্কার মধ্যেই সোমবার জেনেভায় দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
সেখানে আফগানদের সহযোগিতার জন্য তাৎক্ষণিক ৬০ কোটি ৬০ লাখ ডলার দরকার বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ অর্থের এক-তৃতীয়াংশই খাদ্য সংকট মেটাতে ব্যয় হবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন গুতেরেস। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আফগানিস্তানে নতুনভাবে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১২ কোটি ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স। এক কোটি ১৫ লাখ ডলার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে নরওয়ে।
গত ২০ বছর ধরে বিদেশি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল আফগানিস্তান। তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগেই দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক বা প্রায় দুই কোটি মানুষ বিদেশি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। নগদ অর্থ, খাদ্যসংকট আর তীব্র খরার কারণে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এর ওপর গত মাসে পশ্চিমা সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জোরপূর্বক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয় কট্টরপন্থি তালেবান। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ কাবুলের জন্য নিয়মিত অর্থ সহায়তা বাতিলের ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
এ অবস্থায় যুদ্ধ, দুর্ভোগ আর অনিরাপত্তার মধ্যে আফগান জনতা ‘সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে’ বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের অর্থনীতি চরম সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে মৌলিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হচ্ছে না।’
আফগানিস্তানে থাকা খাদ্যের মজুত চলতি মাসেই শেষ হয়ে আসতে পারে বলেও জানান গুতেরেস। প্রায় দেড় কোটি আফগান দুর্ভিক্ষের মুখে বলে আগেই সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
এদিকে প্রতিবেশী চীন, পাকিস্তান ও রাশিয়া এরই মধ্যে আফগানদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিন কোটি ১০ লাখ ডলারের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত পণ্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে বেইজিং। করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ৩০ লাখ ডোজের প্রথম চালানও শিগগিরই পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি।
রান্নার তেল ও ওষুধের চালান কাবুলে পাঠিয়েছে ইসলামাবাদ। এ ছাড়া বহির্বিশ্বে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থ জব্দ না রাখতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান।
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তালেবানের নতুন সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে রাশিয়া।