যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের সঙ্গে ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের যোগাযোগের নথি প্রকাশ করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
৯/১১-এর হামলার ২০ বছর পূর্তির পরদিন রোববার এফবিআই অপ্রকাশিত নথি জনসমক্ষে হাজির করে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত নথি প্রকাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চাপ দিয়ে আসছিলেন নিহতদের স্বজনরা।
তাদের ভাষ্য, সৌদি সরকার ৯/১১-এর হামলার বিষয়টি জানত। কিন্তু তারা হামলা ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্বজনরা সম্প্রতি এও জানান, নথি প্রকাশ না করে হামলার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভে উপস্থিত হওয়া উচিত হবে না বাইডেনের।
নথিতে ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলায় সৌদি আরবের নাগরিকদের জড়িত থাকার কথা বলা হলেও ওই হামলা পরিকল্পনায় সৌদি সরকারের সম্পৃক্ততার উল্লেখ প্রতিবেদনের কোথাও করেনি এফবিআই।
৯/১১-এ ১৯ জন আত্মঘাতী হামলকারীর ১৫ জনই সৌদি আরবের নাগরিক ছিলেন।
অপ্রকাশিত নথি প্রকাশে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে আগেই স্বাগত জানায় ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাস।
একই সঙ্গে হামলাকারীদের সঙ্গে সৌদি রাজতন্ত্রের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ‘মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসূত’ বলে নাকচ করে সৌদি আরব।
দুই দশক আগে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে যুক্তরাষ্ট্রে চারটি সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলা হয়।
সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বিমান ছিনতাই করে বিমানগুলোকে ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ব্যবহার করে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও ভার্জিনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের ভবনে আঘাত করে।
ওই হামলায় আল-কায়েদার ১৯ সদস্য ছাড়াও প্রায় ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের শনিবার স্মরণ করে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে ১৬ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করে এফবিআই।
সৌদি আরবের কয়েকজন নাগরিকের সঙ্গে নাওয়াফ আল-হাজমি ও খালিদ আল-মিধার নামে দুই বিমান ছিনতাইকারীর যোগাযোগের উল্লেখ রয়েছে ওই সব নথিতে।
২০০০ সালে শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে ওই ছিনতাইকারীরা।
এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের সৌদি কনস্যুলেটে প্রায়ই যেতেন ওমর আল-বায়োমি নামের এক ব্যক্তি।
ওই দুই বিমান ছিনতাইকারীকে উল্লেখযোগ্য লজিস্টিক্যাল সহায়তা দেন বায়োমি।
সূত্র এফবিআইকে জানায়, কনস্যুলেটে বায়োমি বিশেষ খাতির পেতেন।
এফবিআই জানায়, বিমান ছিনতাইকারী হাজমি ও মিধারকে অনুবাদ, ভ্রমণ, থাকার জায়গা, অর্থসহায়তা থেকে শুরু করে আরও অনেক সহায়তা দেন বায়োমি।
এফবিআইয়ের নথিতে আরও বলা হয়, হাজমি ও মিধারের সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসের কিং ফাহাদ মসজিদের ইমাম ফাহাদ আল-থুমাইরির যোগাযোগ ছিল।
বিভিন্ন সূত্র ফাহাদকে ‘চরমপন্থি মতবাদের’ ধারক হিসেবে উল্লেখ করে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়োমি ও ফাহাদ দুজনই ৯/১১ হামলার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়েন।
সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হামলায় নিহতদের পরিবারের সাম্প্রতিক মামলা ও তদন্ত নথি প্রকাশে আইনসভা কংগ্রেসের জোরালো চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সেপ্টেম্বর ৯/১১ হামলার নথি প্রকাশে এফবিআইকে নির্দেশ দেন বাইডেন।
একই সঙ্গে ওই হামলায় সৌদি আরবের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার বিষয়ও প্রকাশ করতে বলা হয়।
ওই সময় নির্বাহী এক আদেশে বলা হয়, ‘আর কয়েক দিন পরেই ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্তি।
‘ওই হামলায় জড়িতদের বিষয়ে সরকারি অনুসন্ধানে কী পাওয়া গেছে, তা জানার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের রয়েছে।’
নির্দেশে বলা হয়, ‘আগামী ছয় মাসে ধাপে ধাপে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
‘পুরো গোয়েন্দা নথি প্রকাশ করলে তা জাতীয় নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের হামলা ঠেকানোর ক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে।
‘তাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে ভারসাম্য রেখে নথি প্রকাশ করতে হবে।’