আফগানিস্তানের একঝাঁক তরুণ শিল্পী ও অধিকারকর্মী অনেক নিষ্ঠা ও যত্নের সঙ্গে রাস্তার ধারে দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ম্যুরাল এঁকে রাঙিয়ে দেন।
শান্তি, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও আশার বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে ওই শিল্পী ও অধিকারকর্মীরা আর্টলর্ডস প্রতিষ্ঠা করেন।
আর্টলর্ডসের শিল্পীরা তাদের স্ট্রিট আর্টের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতাবানদের লজ্জার কারণও হন।
প্রায়ই ওই শিল্পীরা ম্যুরাল এঁকে যুদ্ধবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অপকর্ম তুলে ধরতেন।
একই সঙ্গে আফগান বীরদের ম্যুরালও আঁকা হতো। এ ছাড়া সহিংসতার বদলে আলোচনার আহ্বান এবং নারী অধিকারের দাবিসংবলিত চিত্রশিল্পও রচিত হয়ে আসছিল আফগানিস্তানের পথেঘাটে।
বহুবার মৃত্যু-হুমকি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় আর্টলর্ডসের সদস্যরা। চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনগুলো তাদের ‘নাস্তিক-মুরতাদ’ ট্যাগও দেয়।
এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও গত সাত বছরে কখনও কাজ থামাননি আর্টলর্ডসের শিল্পীরা।
তবে দেশ তালেবানের কবজায় গেলে থেমে যায় শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধ ওইসব তরুণের কাজ।
১৫ আগস্ট সকালে কাবুলের প্রবেশপথে অপেক্ষা করছে তালেবান।
সে সময় আর্টলর্ডসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ওমাইদ শরিফি ও তার পাঁচ সহকর্মী সরকারি এক ভবনের দেয়ালে ম্যুরালের কাজ করছিলেন।
কয়েক ঘণ্টা পর সরকারি ওই ভবনটি থেকে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষজনকে বের হয়ে আসতে দেখেন তারা।
আর্টলর্ডসের শিল্পীদের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: এএফপি
শহরের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখে আর্টলর্ডসের গ্যালারিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন ওই শিল্পীরা।
শরিফি বলেন, ‘সব সড়ক বন্ধ ছিল। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের গাড়ি থেকে বের হয়ে আসছিলেন। সবাই ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটছিলেন।’
গ্যালারিতে পৌঁছে শরিফি জানতে পারেন, তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হয়েছে।
রাজধানী শহর দখলের কয়েক সপ্তাহ পর কাবুলের অনেক স্ট্রিট আর্ট মুছে দেয় তালেবান। এর পরিবর্তে সেখানে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা লেখা হয়।
২০১৪ সাল থেকে আফগানিস্তানজুড়ে ২ হাজার ২০০-এর বেশি ম্যুরাল আঁকেন আর্টলর্ডসের শিল্পীরা।
তাই শিল্পকর্ম মুছে দেয়ার ভাইরাল ছবি দেখে ব্যথিত হন শরিফি।
সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফোনে এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শরিফি বলেন, ‘ওই ছবি দেখে মনে হয়েছে, তালেবান কাবুলকে কাফনের কাপড়ে মুড়ে দিচ্ছে।’
২০১৮ সালে কাবুলে এএফপিকে সাক্ষাৎকার দেন আর্টলর্ডসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ওমাইদ শরিফি।
আর্টলর্ডসের শিল্পীদের ম্যুরাল মুছে দেয়ার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া শরিফি জানান, ন্যায়বিচারের পক্ষে শিল্পীদের প্রচার থামবে না।
৩৪ বছর বয়সী শরিফি বলেন, ‘আমরা কখনও চুপ থাকব না।
‘আমাদের কথা বিশ্বকে জানাব। প্রতিটি দিন যাতে তালেবান আফসোস করে, আমাদের সেই লড়াই জারি থাকবে।’