আফগানিস্তানের পাঞ্জশির প্রদেশে তালেবানবিরোধী বাহিনী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্ট ফোর্সের (এনআরএফ) মুখপাত্র ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ফাহিম দাশতি নিহত হয়েছেন।
সোমবার দেশটির সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এনআরএফের কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ড্রোন হামলায় প্রদেশের আনাবা জেলায় নিহত হয়েছেন ফাহিম। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান। গোষ্ঠীটি বলছে, এনআরএফের নিজেদের কোন্দলে নিহত হয়েছেন ফাহিম।
ফাহিম দাশতি আফগানিস্তানে একজন প্রখ্যাত গণমাধ্যম উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি দেশটির জাতীয় সাংবাদিক ইউনিয়নেরও প্রধান ছিলেন।
সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা শুয়াইব ফানা বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয় ছিলেন ফাহিম দাশতি। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফাহিমের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’
১৯৭২ সালে আনাবা প্রদেশের দাশতাক গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম ফাহিমের। তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন।
১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুল পতনের পর কয়েক হাজার স্থানীয় মিলিশিয়া, আফগান সেনাবাহিনী ও বিশেষ বাহিনীর সাবেক সদস্যদের নিয়ে পাঞ্জশিরে জাতীয় প্রতিরোধ বাহিনী (এনআরএফএ) গড়ে তোলেন স্থানীয় নেতা মাসুদ।
আশির দশকে সোভিয়েত ও নব্বই দশকে তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানের আলোচিত যোদ্ধা ছিলেন মুজাহিদীন কমান্ডার প্রয়াত আহমেদ শাহ মাসুদ। তারই ছেলে আহমেদ মাসুদ।
কাবুল পতনের আগে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টিই তালেবান দখল করতে পারলেও পাঞ্জশির তারা দখল করতে পারেনি।
শুধু এবার নয়, আফগানিস্তানে তালেবান প্রতিষ্ঠার পর আজ পর্যন্ত ওই প্রদেশ কখনও তালেবানের দখলে যায়নি।
ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা ও স্থানীয়দের চরম তালেবানবিরোধী মনোভাব পাঞ্জশিরকে অনেকটা অজেয় দুর্গে পরিণত করেছে।
তবে এবার অজেয় পাঞ্জশির দখলে মরিয়া তালেবান। এখন পর্যন্ত হাতের মুঠোয় না আসা প্রদেশটি দখলে সপ্তাহখানেক ধরে এনআরএফএর বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে সংগঠনটির।
সংঘর্ষে গত কয়েক দিনে উভয় পক্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
এদিকে সোমবার তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে পাঞ্জশির দখলের ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে মুজাহিদ বলেন, ‘এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশ কঠিন এক যুদ্ধ থেকে মুক্ত হলো।’
এদিকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, পাঞ্জশিরে যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনায় বসতে তালেবানকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ধর্মীয় নেতারা।
এ বিষয়ে মাসুদ জানান, ওলামা কাউন্সিলের মধ্যস্থতায় তালেবানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এতে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি রাখা যেতে পারে।
রোববার মাসুদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এনআরএফএ চলমান সমস্যাগুলো সমাধানে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। দ্রুত যুদ্ধের শেষ চাচ্ছে, সেই সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।
‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিতে পাঞ্জশির ও পার্শ্ববর্তী আন্দারাবে তালেবানের হামলা এবং সামরিক তৎপরতা বন্ধের শর্তে এনআরএফএ যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত।’