বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নক্ষত্রকে গিলে ফেলে ‘বদহজম’

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:৪৫

বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, জীবিত নক্ষত্রটি আরেকটি ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্রকে গিলে ফেলেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত হজম করতে পারেনি। পেটের ভিতরে ঘুরতে থাকা মৃত নক্ষত্রটি একপর্যায়ে কেন্দ্রে পৌঁছে বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর যা অবশেষ, তা পরিণত হয় পরিপূর্ণ একটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরে।

অবিশ্বাস্য এক মহাজাগতিক যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছেন জ্যোতির্বিদেরা। পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দুটি নক্ষত্রের মধ্যে হয়েছে এই লড়াই।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরস্পরের চারপাশে পাক খাওয়া দুটি নক্ষত্রের একটি মরে যাওয়ার পর পরিণত হয়েছিল ব্ল্যাক হোল অথবা নিউট্রন স্টারে। এরপর সেটি জীবিত নক্ষত্রের পেটে বিলীন হওয়ার বহু কাল পরে ঘটায় বিপুল বিস্ফোরণ।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জীবিত নক্ষত্রটি ওই ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্র জাতীয় বস্তুটিকে গিলে ফেলেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত হজম করতে পারেনি। পেটের ভিতরে ঘুরতে থাকা মৃত নক্ষত্রটি একপর্যায়ে কেন্দ্রে পৌঁছে বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর যা অবশেষ, তা পরিণত হয় পরিপূর্ণ একটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরে।

বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে শুক্রবার প্রকাশ পায় বিষয়টি।

সায়েন্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের মরু অঞ্চল সান অগাস্টিন সমভূমির ‘কার্ল জি জানস্কি ভেরি লার্জ অ্যারে (ভিএলএ) রেডিও টেলিস্কোপ’-এ প্রায় চার বছর আগে ধরা পড়ে মহাজাগতিক যুদ্ধের দৃশ্যটি।

২৭টি বিশাল অ্যান্টেনানির্ভর দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি বেতার তরঙ্গভিত্তিক; অর্থাৎ মহাজাগতিক বেতার তরঙ্গ শনাক্তের মাধ্যমে আকাশে বিভিন্ন ঘটনার অস্তিত্বের খোঁজ দেয় এ যান্ত্রিক ব্যবস্থা।

বিজ্ঞানীরা জানান, ২০১৭ সালের এক রাতে মহাকাশে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের সময়েই হঠাৎ প্রচণ্ড তীব্রতায় আকাশ চিড়ে আসা বেতার তরঙ্গ শনাক্ত করে ভিএলএ। নক্ষত্রে বিস্ফোরণের সময় যে ‘সুপারনোভা’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনই শক্তিশালী ছিল ওই বেতার তরঙ্গ।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, খুদে কোনো নক্ষত্রকে ঘিরে একটি ছায়াপথ তৈরি হচ্ছিল সেখানে।

ক্যালটেকের মহাকাশবিজ্ঞানী ডিলন ডং বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি বোঝার পর চমকে গিয়েছিলাম আমরা।’

ডিলন ও তার সহকর্মীরা ভিএলএর পাশাপাশি হাওয়াইয়ের ডব্লিউ.এম. কেক মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ছায়াপথটিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। কেক টেলিস্কোপটি এতটাই শক্তিশালী যে সেটি মানুষের চোখের মতোই পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃশ্য ধারণে সক্ষম।

কেক টেলিস্কোপে সে সময় ধরা পড়ে, একটি কেন্দ্রীয় অবস্থান থেকে চতুর্দিকে ঘণ্টায় ৩২ লাখ কিলোমিটার গতিতে আলোকজ্জ্বল একটি প্রবাহ ছিটকে যাচ্ছে। ওই পরিস্থিতি থেকেই বিজ্ঞানীরা ধারণা করে নেন, সেখানে কোনো ধরনের শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এরপরে গবেষকদের দলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) জাপানের বিজ্ঞানীদের তৈরি করা একটি টেলিস্কোপের সাহায্য নেন। টেলিস্কোপটির নাম ‘মনিটর অফ অল স্কাই এক্স-রে ইমেজ’ বা সংক্ষেপে ম্যাক্সি।

শুরু হয় ম্যাক্সির সংরক্ষণ করা আগের তথ্য বিশ্লেষণের কাজ। শনাক্ত হয় অতি উজ্জ্বল বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ বা এক্স-রে রশ্মির উপস্থিতি।

এক্স-রে রশ্মির এই বিস্ফোরণ মহাকাশের ঠিক ওই জায়গাটিতেই শনাক্ত হয়, যেখানে ২০১৭ সালের তীব্র বেতার তরঙ্গটি শনাক্ত হয়েছিল। তবে দুটি ঘটনার সময় ছিল আলাদা।

এক্স-রে রশ্মির বিস্ফোরণটি ম্যাক্সিতে ধরা পড়েছিল ২০১৪ সালে, যা সে সময় বিজ্ঞানীদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল।

এবার সব তথ্য একসঙ্গে সমন্বয় করতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা।

ডিলন ও তার সহকর্মীদের মতে, অনেক আগে দুই কক্ষপথে থেকে একে অন্যকে ঘিরে ঘুরতে থাকা দুটি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল। এদের মধ্যে একটির মৃত্যু ঘটে। অতিকায় ওই বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্রটি হয় কোনো কৃষ্ণগহ্বর, না হয় নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়েছিল।

কমপক্ষে ১০ থেকে ২৫ বা আরও বেশি সৌর ভরের সমান কোনো অতিকায় নক্ষত্র ভেঙে গেলে সেটির কেন্দ্রীয় অংশকে বলা হয় নিউট্রন নক্ষত্র।

অন্যদিকে, সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো নক্ষত্রের মৃত্যুর পর প্রচণ্ড সংকুচিত অবস্থা। কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতোই তীব্র যে একবার এর ভেতরে কিছু প্রবেশ করলে তা আর বাইরে বের হতে পারে না, তা সে ক্ষুদ্র কণা কিংবা আলো- যাই হোক না কেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৫০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের মৃত নক্ষত্রটিকে গ্রাস করে নেয় অপর জীবিত নক্ষত্রটি। শুরুতে নক্ষত্রের বহিঃআবরণে প্রবেশ করে মৃত নক্ষত্রটি। এর কয়েক শ বা হাজার বছর পর মৃত নক্ষত্রটি পৌঁছে যায় মূল নক্ষত্রের কেন্দ্রে। এই সময়জুড়ে বড় তারাটি থেকে খসে পড়া বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও ধুলা মৃত নক্ষত্রের চারপাশে একটি আবরণ তৈরি করে।

পুরো বিষয়টিকে বিজ্ঞানীরা সাধারণ ভাষায় অভিহিত করছেন ‘মৃত নক্ষত্র- অর্থাৎ ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্রকে জীবিত নক্ষত্রের গিলে ফেলা’ বলে।

এরপর জীবিত নক্ষত্রের কেন্দ্রে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আর মৃত নক্ষত্রের জটিল চৌম্বকীয় মিথষ্ক্রিয়ায় তৈরি হয় তীব্র শক্তি; যার ফলে জীবিত নক্ষত্রটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণই ২০১৪ সালে এক্স-রে রশ্মির তীব্র বিচ্ছুরণ হিসেবে ম্যাক্সি টেলিস্কোপে ধরা পড়েছিল।

বিস্ফোরণে দ্বিতীয় নক্ষত্রটির ধ্বংসাবশেষ প্রচণ্ড গতিতে মৃত নক্ষত্রকে (কৃষ্ণগহ্বর বা নিউট্রন তারকা) ঘিরে থাকা বহিঃআবরণে প্রবেশ করে। অর্থাৎ মৃত নক্ষত্রটিতেই পরে বিলীন হয় জীবিত নক্ষত্রটি। এ ঘটনাটিই ২০১৭ সালে শনাক্ত করেছিল ভিএলএ রেডিও টেলিস্কোপ।

এ বিভাগের আরো খবর